লাইফস্টাইল ডেস্ক
হাসলে শরীর সুস্থ থাকে। এর ফলে মন, লিভার, হার্ট সবই ভালো থাকে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। মন খুলে হাসলে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা দূর হয়ে যায়। এজন্য শরীর মন ভালো রাখতে কৃত্রিম হাসির ক্লাবও তৈরি বিভিন্ন দেশে। সেখানে হাসির অনুশীলন করানো হয় সবাইকে।
তবে জানেন কি, হাসি না-কি প্রাণঘাতীও হতে পারে। অবাক লাগলেও, বিষয়টি সত্যি। হাসতে হাসতে প্রাণ যাওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে তেমন বিরল নয়। তবে হাসির কারণে মৃত্যু নয় বরং অতিরিক্ত হাসির ফলে শরীরে যে প্রভাব পড়ে; তার কারণে মৃত্যু হতে পারে। জেনে নিন অতিরিক্ত হাসি যেভাবে মৃত্যুর কারণ হতে পারে-
অতিরিক্ত হাসির ফলে মস্তিক ফেটে যেতে পারে। যাকে বলা হয় রুপচার্ড ব্রেইন অ্যানুরিসম। এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ধমণী এবং শিরাগুলি ছিঁড়ে যেতে পারে। ফলে ইন্টারনাল ব্লিডিং শুরু হয় মস্তিষ্কে। তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্ক আর কাজ করে না। মস্তিষ্ক এবং রক্তের চাপে খুলি ফেটে যেতে পারে। এর ফলে ঘটতে পারে মৃত্যু।
এক্ষেত্রে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়-
ক. হঠাৎ এবং অত্যাধিক পরিমাণে মাথা ব্যথা
খ. বমি হওয়া
গ. চোখে দ্বিগুণ সংখ্যক দৃষ্টি
ঘ. খিঁচুনি
ঙ. আলোর প্রতি স্পর্শকাতরতা
চ. থমকে যাওয়া বা মনোযোগ হারানো
এ ছাড়াও অতিরিক্ত হাসলে শারীরিক যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে-
১. অতিরিক্ত হাসির কারণে হাঁপানি হতে পারে। তবে শুধু হাসিই নয়; অতিরিক্ত কান্না, চিন্তা, উত্তেজনার কারণেও হাঁপানি হতে পারে।
২. অনেকেরই হালকা হাঁপানির সমস্যা থাকে। আর সেই অবস্থায় অতিরিক্ত হাসলে হাঁপানি আরও বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে ভয়ানক শ্বাসকষ্ট হয়। দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৩. ভয়ানক এক হাসির রোগের নাম জিলাস্টিক সিজার। সদ্য সিজার হয়েছে এমন রোগীর মধ্যেই এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে অকারণে অস্বাভাবিক শব্দ করে হাসতে থাকেন রোগী। সেই হাসি আনন্দের থেকে অনেক বেশি কষ্টের।
৪. জিলাস্টিক সিজারে আক্রান্ত রোগীরা টানা এক মিনিট পর্যন্ত হাসতে পারেন। হাসির উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। হাসি থামলে শরীরে ভয়ানক কষ্ট হয়। ব্রেন টিউমারের কারণেও জিলাস্টিক সিজারে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে।
৫. অতিরিক্ত হাসির কারণে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে শ্বাসরোধ হয়েও মৃত্যু হতে পারে অনেকেরই।
৬. অতিরিক্ত হাসলে শ্বাসকষ্ট হয়ং। তবে তা সামলে নিলে বেঁচে যাবেন। অন্যদিকে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই বিপদ। এ ধরনের মৃত্যু সাধারণত লাফিং গ্যাস বা নাইট্রাস অক্সাইডের ওভারডোজের কারণে হয়ে থাকে।
৭. হাসতে হাসতে আবার অনেকে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। ঠিক যেমন কাঁদতে কাঁদতে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সাময়িকভাবে এমন জ্ঞান হারানোকে বলা হয় এটি হলো সিনকোপ। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক না হলে এই সমস্যা দেখা যেতে পারে।
৮. সাধারণত লো ব্লাড প্রেশার যাদের; তাদের ক্ষেত্রে সিনকোপ বেশি দেখা দেয়। এর ফলেহার্টে রক্ত চলাচল, ডিহাইড্রেশন, শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এই সিনকোপের কারণ হতে পারে অতিরিক্ত কাশি অথবা হাসি।
৯. প্রয়োজনের থেকে বেশি জোরে জোরে হাসির ফলে দমবন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এমন সমস্যা লাগাতার হলে হার্টের অসুখ হতে পারে।
জেনে নিন হাসির উপকারিতা
১. কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। ঠিক তেমনই অতিরিক্ত হাসিও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
২. হাসলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। মন খুলে হাসলে মানসিক স্ট্রেস কমে, উদ্বেগ এবং হতাশা চলে যায়।
৩. এ ছাড়াও নিয়ন্ত্রিত হাসির ফলে শরীরের পেশী আরাম পায়, হাসলে শরীরের অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। যা হার্ট এবং ফুসফুসের পক্ষে ভালো।
৪. সেইসঙ্গে হাসলে মনের নেতিবাচক ধারণা চলে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে মন খুলে হাসলে।
৫. তবে হার্ট, মস্তিষ্ক বা শ্বাসকষ্টের কোনো সমস্যা থাকলে অতিরিক্ত বা দমবন্ধ হাসি থেকে বিরত থাকুন।
বিএসডি/এএ