করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনলাইনে ক্লাস হলেও পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়েছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নতুন সেশন শুরু হওয়ার কথা থাকলে মে মাসেও তা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়েও অনিশ্চয়তা কাটছে না। সরাসরি পরীক্ষা নিতে না পারায় এর বিকল্প হিসেবেও আলোচনা করছে প্রশাসন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পরীক্ষা না দিয়ে সরাসরি বা অ্যাসাইনমেন্ট আকারে পরীক্ষা দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।
গত বছরের মার্চ মাসে করোনা মহামারি দেখা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হলেও অনলাইনে চলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস কার্যক্রম। অনলাইনে ক্লাস চললেও ধীরগতির ইন্টারনেট সেবার কারণে অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেননি। আবার অনেকের স্মার্টফোন বা কম্পিউটার না থাকার ফলে তারাও এই কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি। দীর্ঘদিন পরীক্ষা না হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও। দুয়েকবার সরাসরি পরীক্ষা নেওয়ার কথা একাডেমিক কাউন্সিল থেকে গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ ডিন কমিটির সভায়ও এ বিষয়ে একটি রূপরেখা দিতে বলা হয়। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জুলাই থেকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্তের কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরাসরি পরীক্ষা, অনলাইনে পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা এই তিনটি মাধ্যমে নেওয়ার আলোচনা চলছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ইন্টারনেট সমস্যার কারণে যেসব শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারেননি, অনলাইনে পরীক্ষা হলেও সেসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পরীক্ষা দিতে নারাজ হলেও অ্যাসাইনমেন্ট অথবা সরাসরি পরীক্ষা দিতে চান তারা। যদি জুলাইয়ের মধ্যে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাহলে তারা সরাসরি পরীক্ষা দিতে চান। আর যদি এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে চান। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে চান। শিক্ষার্থীরা চান, তাদের এমন অ্যাসাইনমেন্ট হোক, যা হবে গবেষণাধর্মী এবং তা বাড়িতে বসে সম্পন্ন করা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম বলেন, যদি হল খুলে দেওয়া হয় তাহলে সরাসরি পরীক্ষা দেওয়া আমাদের জন্য সহজ হবে। হল না খুললে আমরা পরীক্ষা দিতে পারবো না। হল বন্ধ থাকলে আমরা ঢাকায় গিয়ে কোথায় থাকবো? করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অ্যাসাইনমেন্ট এর মাধ্যমে পরীক্ষা নিলে ভালো হয়। এতে করোনার ঝুঁকিও থাকবে না পাশাপাশি আমাদের গবেষণাও হলো।
চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী ইশরাত জাহান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল পরীক্ষা যে ধরনের প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হয় তা সরাসরি পরীক্ষায় দিলে ভালো হয়। অন্যথায় মৌলিক অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে হলে সবার জন্য সহায়ক হতো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত আছে। পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ডিনদের একটি রূপরেখা তৈরি করতে বলা হয়েছে। সেটি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।