হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
অনলাইন পরীক্ষায় লুঙ্গি পড়ে অংশগ্রহণের দায়ে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) এর তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ফুড প্রসেস এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ তম ব্যাচের সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
এছাড়াও একই পরীক্ষায় অসুদাপায় অবলম্বনের অভিযোগে আরও ২ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং আরেক শিক্ষার্থীর নির্দিষ্ট সময়ের আগে খাতা জমা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। লুঙ্গি পড়ার দায়ে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অসুদাপায় অবলম্বন না করলেও তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অন্যদিকে অনুষদের ডিন বলছেন, ‘লুঙ্গি পড়ার অভিযোগে বহিষ্কার করার যে বিষয়টা সেটা মোটেও সত্য নয়, বরং পরীক্ষার হলে অসদুপায় এবং পরীক্ষার নিয়ম অনুসরণ না করার কারনে বহিষ্কার হয়েছে শিক্ষার্থীরা।’
জানা যায়, সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ফুড এ্যন্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জেনারেল ক্যামিস্ট্রি কোর্সের (কোর্স কোড CHE-111) পরীক্ষা ছিলো। দুপুর সাড়ে ১২ টা থেকে শুরু হওয়া ঐ অনলাইন পরীক্ষার কয়েক মিনিটের মধ্যে ইম্প্রুভ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ফাহাদ (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থীকে প্রথম বহিষ্কার করা হয়।
ফাহাদ জানায়, ‘পরীক্ষা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাকে ক্যামেরা এঙ্গেল ঠিক করতে বলা হয়। তখন ক্যামেরা উপর-নিচ করার সময় আমার লুঙ্গি স্যারের দৃষ্টি গোচর হয়। তখন স্যার লুঙ্গি নিয়ে কথা তোলেন। এছাড়াও আমাকে স্যার কয়েকবার ডাকলে আমি না শোনায় স্যার আমাকে জুম মিটিং থেকে বের করে দেন এবং বহিষ্কার করেন।’
তার মিনিট দশেক পর বহিষ্কার করা হয় ২০ তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী সামিউল ইসলামকে (ছদ্মনাম)।
সে জানায়, ‘আমি যেখানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম তার পিছনে জানালা থাকায় পিছন থেকে আলো আসছিল। আমার ফেস ক্যামেরায় সুন্দরভাবে দেখা যাচ্ছিলো না। তখন স্যার আমাকে জানালায় পর্দা দিতে বললে আমি উঠে যাই। জানালা বন্ধ করার সময় স্যার আমার লুঙ্গি দেখতে পান। তারপর ড্রেসকোডের কথা তুলে স্যার আমাকে জুম থেকে বের করে দেন। আমি পরে স্যারকে কল দিলে স্যার বলেন আমি বহিষ্কার।’
এছাড়াও ছামিউল (ছদ্মনাম) আরও জানায়, ‘আমার আগে একজনকে (ফাহাদ) বহিষ্কার করা হয়েছিল সেও লুঙ্গি পড়া ছিল। আমিও যেহেতু লুঙ্গি পড়া ছিলাম তখন ঐ শিক্ষার্থীর সাথে যেন বেইনসাফি না হয় বলে আমাকেও বহিষ্কার করা হয়।’
লুঙ্গি পড়ার দায়ে বহিষ্কৃত আর এক শিক্ষার্থী ২০ ব্যাচের রিহাল (ছদ্মনাম) জানায়, সে পরীক্ষা চলাকালীন ক্যামেরার বাইরে তাকাতাকি করতেছিল। যার দরুন তাকে তার রুমের চারপাশ দেখাতে বলা হয়। যখন সে চারপাশ দেখায় তখন তার পড়নের লুঙ্গিও দৃষ্টি গোচর হয় এবং তাকেও জুম মিটিং থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রিহাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন সরকারকে কল করলে তিনি বলেন, ‘তাকে কেন কল করা হয়েছে? এই বিষয়টার সম্পূর্ন দেখভাল করার দ্বায়িত্ব পরীক্ষার সুপারভাইজারের। ‘পরে সুপারভাইজারকে কল করা হলে ১ বার কল রিসিভ করার পর কনভিন্স করতে না পারায় সে আরো ১০ বার কল দিলে তিনি ধরেন নি এবং নাম্বারটি ব্লক লিষ্টে রাখেন। পরে রিহাল (ছদ্মনাম) তার মায়ের নাম্বার থেকে কল করলে সুপারভাইজার কল ধরেন এবং পরিচয় জানতে পারার পর তাকে শাসিয়ে বলে আর একবার কল দিলে এক সাবজেক্ট এ বহিষ্কার না পুরো সেমিষ্টার এর জন্যে বহিষ্কার করায় দেওয়া হবে’।
এদিকে ঐ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আরও তিনজন শিক্ষার্থী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথমে যখন রিহালকে (ছদ্মনাম) বহিষ্কার করা হয়,তখন আমি ভালো করে খেয়াল করিনি। আমি তখন লিখছিলাম। তার একটু পরেই ছামিউলকে (ছদ্মনাম) বহিষ্কার করা হয়। ঐ সময় চেয়ারম্যান স্যার জুমের ব্রেকআউট রুমে প্রবেশ করলে ইনভিজিলেটর চেয়ারম্যান স্যারকে জিজ্ঞাসা করে বলেন স্যার এই ছেলে তো লুঙ্গি পড়ে পরীক্ষা দিচ্ছে তো একে কি করবো। তখন চেয়ারম্যান স্যার বলেন একে জুম থেকে রিভুম করে দাও,রিমুভ না করলে এদের শিক্ষা হবে না। পরে ছামিউলকে জুম থেকে রিমুভ করে দেওয়া হয় এবং পরে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও পরীক্ষা শেষে রিহালের ব্যাপারেও জেনেছি। রিহাল (ছদ্মনাম) ক্যামেরা ঠিক করতে গিয়ে ইনভিজিলেটর লুঙ্গি দেখে ফেলায় ওকেও বহিষ্কার করা হয়েছে’।
এছাড়াও আরও দু’পরীক্ষার্থী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঐ পরীক্ষার একজন সুপারভাইজার ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শিহাবুল আউয়াল বলেন,
‘তারা আমাদের সহযোগিতা করছিলো না এবং আমরা যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছিলাম তারা সেটা সেভাবে অনুসরণ করেনি। বরং আমাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়েছিলো। এরপরও আমরা তাদের সতর্ক করে দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের নির্দেশনা অনুসরণ না করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছি’।
তবে লুঙ্গি পড়ার দায়ে তিনজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘লুঙ্গি পড়ার দায়ে বহিষ্কার করা হলে আমরা আরও অনেককেই বহিষ্কার করতে পারতাম। লুঙ্গি পড়ার জন্য তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। তবে আমরা পরীক্ষা শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের শালীন এবং মার্জিত পোষাক পড়তে বলি। লুঙ্গির পরিবর্তে আমরা প্যান্ট অথবা ট্রাউজার পড়তে অনুরোধ জানাই শিক্ষার্থীদের। তবে লুঙ্গি পড়ার জন্য ঐ তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা সঠিক নয়’।
তবে যেসকল শিক্ষার্থীকে এক বিষয়ে বহিষ্কার হয়েছে তারা পরীক্ষা দিতে চাইলে ডিন বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করতে পারে বলে জানান অধ্যাপক মো: শিহাবুল আউয়াল।
এ ব্যাপারে জানতে ফুড সাইন্স এ্যন্ড নিউট্রিশন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ঐ পরীক্ষার প্রধান সুপারভাইজার সহযোগী অধ্যাপক ড. এন.এইচ.এম রুবেল মজুমদারের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি অনুষদীয় ডিন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
তবে অনলাইন পরীক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী এসব শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা সঠিক হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারির ফলে সৃষ্ট সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে চলতি বছরের ৪ আগষ্ট থেকে অনলাইন পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করে হাবিপ্রবি।
বিএসডি/এমএম