আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্ব স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের ছাড়পত্র পায়নি ভারতের করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন। সংস্থার পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে , করোনার ঝুঁকি ঠেকাতে এই টিকা কতখানি কার্যকর – তা যাচাই করতে আরও তথ্য প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) ডব্লিউএইচওর কারিগরি উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক ইমেইল বার্তায় ভারতের বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) নিশ্চিত করেছে ডব্লিউএইচও।
ইমেইল বার্তায় ডব্লিউএইচও বলেছে, ‘আজ, মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সংস্থার কারিগরি উপদেষ্টা দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে- কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে আরও কিছু তথ্য পাঠাতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার বিষয়ক বৈশ্বিক ছাড়পত্রের জন্য এসব তথ্যের পর্যালোচনা করা জরুরি।’
‘কারিগরি উপদেষ্টা পরিষদ আশা করছে, চলতি সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ পাঠাবে এই টিকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। যদি তা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে আগামী ৩ নভেম্বরের বৈঠকে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরিষদ।’
করোনা টিকার স্বীকৃতির বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত ও চুড়ান্ত সুপারিশের ক্ষমতা রাখে কারিগরি উপদেষ্টা পরিষদ। পাশাপাশি, কাজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার আছে এই পরিষদের।
গত মঙ্গলবার ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছিলেন, কোভ্যাক্সিন বিষয়ক যেসব তথ্য ডব্লিউএইচওর হাতে আছে, সেগুলো যাচাই করা প্রায় শেষ করে এনেছে কারিগরি উপদেষ্টা পরিষদ, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক ছাড়পত্র পেতে পারে কোভ্যাক্সিন।
কিন্তু ডব্লিউএইচওর মঙ্গলবারের ইমেইল বার্তার পর এটি স্পষ্ট- ছাড়পত্রের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে কোভ্যাক্সিনকে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য চলতি বছর জুলাই মাসে ডব্লিউএইচও বরাবর আবেদন ও আনুষাঙ্গিক তথ্য পাঠিয়েছিল কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতকারি প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক।
২০২০ সালের শেষের দিকে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি ভারত বায়োটেক তাদের উদ্ভাবিত করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন বাজারে আনে। এখন পর্যন্ত এটি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত একমাত্র করোনা টিকা।
এই টিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে মৃত ও বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করোনাভাইরাস দিয়ে। করোনাভাইরাসের যে নমুনাটি এই টিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে- ভারত বায়োটেককে তা সরবরাহ করেছে দেশটির জীবাণুবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি।
কোভ্যক্সিন দুই ডোজের করোনা টিকা। এটি সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। গত ৩ জুলাই কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য প্রকাশ করেছে ভারত বায়োটেক। সেখানে বলা হয়েছে, করোনা প্রতিরোধে প্রায় ৭৮ শতাংশ কার্যকর কোভ্যাক্সিন।
চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এই কর্মসূচিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা টিকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ড, যেটি প্রস্তুত করেছে ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের টিকা কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ভারতের টিকাদান কর্মসূচিতে কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড- দু’টি টিকাই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া ব্রাজিলসহ আরও কয়েকটি দেশেও অনুমোদন পেয়েছে কোভ্যাক্সিন।
করোনায় জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য এ পর্যন্ত ৬ টি টিকার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এগুলো হলো- ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা (সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত), অ্যস্ট্রাজেনেকা (ইউরোপে উৎপাদিত), জনসন অ্যান্ড জনসন বা জ্যানসেন, মডার্না ও সিনোফার্ম।
কোভ্যাক্সিন অনুমোদন পেলে এই সংখ্যা পৌঁছাবে সাতে।
এদিকে, কোভ্যাক্সিন ডব্লিউএইচওর অনুমোদন না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ভারতীয়রা। কারণ, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এখনও স্বীকৃত করোনা টিকা নয় কোভ্যাক্সিন।
ফলে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে কোভ্যাক্সিনের ডোজ নেওয়া ভারতীয়দের। এই সমস্যা সমাধানের পথ আপাতত একটিই- ডব্লিউএইচওর স্বীকৃতি।
সূত্র: এনডিটিভি