অর্থনীতি ডেস্ক:
টানা আটবার ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর অবশেষে গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের (জিডিটি) নিলামে কমেছে দুগ্ধপণ্যের গড় দাম। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জিডিটি নিলামে দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচক ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। দরপতনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে ননিযুক্ত গুঁড়ো দুধ (ডব্লিউএমপি)।
দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচক কমে প্রতি টন পণ্যের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৩৬ ডলারে। এবারের নিলামে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী অংশ নেয়। এতে জয়ী হয়েছে ১১৭ জন। নিলামে সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার ৮৭ টন দুগ্ধপণ্য সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার ৩৭৫ টন।
সবগুলো দুগ্ধপণ্যের মধ্যে খামারিরা সরাসরি ডব্লিউএমপি থেকে মুনাফা অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক বাজারেও পণ্যটির প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সর্বশেষ নিলামে পণ্যটির দাম ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৮৬৭ ডলারে। এর আগের নিলামগুলোয় পণ্যটির দাম ৪ হাজার ডলারের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
দুগ্ধপণ্যের গড় মূল্য কমলেও ননিবিহীন গুঁড়ো দুধসহ মাখন, চেডার ও ল্যাকটোসের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ডব্লিউএমপির পরই প্রভাবশালী পণ্য ননিবিহীন গুঁড়ো দুধ (এসএমপি)। জিডিটি মূল্যসূচক অনুযায়ী, সর্বশেষ নিলামে পণ্যটির দাম বেড়েছে দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৩ হাজার ৭৪৫ ডলারে। এছাড়া মাখনের দাম ১ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৮৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে। নিলামে মাখনযুক্ত গুঁড়ো দুধ প্রস্তাব করা হয়নি। এদিকে চেডার পনিরের দাম দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের মূল্য স্থির হয়েছে ৫ হাজার ২৪১ ডলারে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ল্যাকটোসের দাম। পণ্যটি ১ হাজার ৩৯০ ডলারে বিক্রি হয়েছে, যা আগের নিলামের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। অ্যানহাইড্রাস মিল্ক ফ্যাটের দাম দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে টনপ্রতি ৬ হাজার ৭২৪ ডলারে পৌঁছেছে।
এনজেডএক্স ডেইরি অ্যানালিস্ট এলেক্স উইনিং বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর দুগ্ধপণ্যের দাম এক পর্যায়ে কমে আসাটা স্বাভাবিক এবং সেটাই ঘটেছে।
জিডিটি মূল্যসূচকের তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম নিলামে সাত বছরের সর্বোচ্চে উঠেছিল দুগ্ধপণ্যের মূল্যসূচক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে দুগ্ধপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ। এ কারণে লাফিয়ে বাড়ছিল দাম। অন্যদিকে ২০২১-২২ মৌসুমে ফন্টেরা কো-অপারেটিভ গ্রুপ খামারিদের ফার্মগেট দুধের সর্বোচ্চ মূল্য পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টিও দুগ্ধপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে। তবে সর্বশেষ নিলামে ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখিতায় ছেদ পড়েছে। যদিও দাম আবারো বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে তারা নিম্নমুখী বৈশ্বিক উৎপাদনকে দায়ী করেছেন।
রোবোব্যাংকের প্রান্তিকভিত্তিক বৈশ্বিক দুগ্ধপণ্য শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, টানা দুই বছরের নিরবচ্ছিন্ন প্রবৃদ্ধির পর নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে বৈশ্বিক দুধ উৎপাদন। চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে উৎপাদন বড় পরিসরে কমতে পারে। এটি বার্ষিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ২০১৪ সালের পর দুধ উৎপাদনে এমন নিম্নমুখিতা আর দেখা যায়নি। উৎপাদন বিপর্যয়ের কারণে দেখা দিচ্ছে সরবরাহ ঘাটতি। ফলে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক বাজার।
কৃষিবাণিজ্য ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মৌসুমের যে সময়ে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল, ঠিক সে সময়েই নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় দুধ উৎপাদন কমেছে। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর উৎপাদন প্রবৃদ্ধিও।
রোবোব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছর বৈশ্বিক দুধ উৎপাদন ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। ফলে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা বাজারে ভারসাম্য আনতে ব্যর্থ হবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, টানা নয় প্রান্তিক বৈশ্বিক দুধ সরবরাহ বাড়লেও চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এসে প্রধান দুধ রফতানি অঞ্চলগুলোর সরবরাহ কমে যায়। শেষ প্রান্তিকে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
বিএসডি/ এলএল