লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ড. অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধানসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য রয়েছে। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালত দুপুরে এ রায় ঘোষণা করবেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ তারিখ ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলার আসামিরা হলেন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সাবেক মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল (সাংগঠনিক নাম সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান (সাংগঠনিক নাম সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস), শফিউর রহমান ফারাবি ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আব্দুল্লাহ। ছয় আসামির মধ্যে মেজর জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন পলাতক।
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ‘অভিজিৎ হত্যার মামলাতে কোনো প্রকার ত্রুটি নেই। মামলাতে ৬ আসামি জড়িত আছে তা রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে তুলে ধরেছে। আসামিদের একেকজনের ভূমিকা ছিল একেক রকম। ফারাবীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাকে হত্যা করা হয়। মেজর জিয়ার নির্দেশে অভিজিতকে হত্যা করা হয়। মামলাতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬১, ১৬৪ ধারায় আসামিদের জবানবন্দি, আর্গুমেন্ট এবং মামলার অন্যান্য আলামত আসামির বিরুদ্ধে গেছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার শুরু থেকে অনেক ত্রুটি রয়েছে। মামলার দায়ের পর থেকে তদন্ত, চার্জশিট, চার্জগঠন, ট্রায়ালে এসে অনেক ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি আমরা। এ মামলার কোনো আই উইটনেস নেই। এ ঘটনার কেউ প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দেয়নি। শুধুমাত্র তদন্ত কর্মকর্তা যা শুনেছেন তাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঘটনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একটা ফর্মাল সাক্ষী বলা যায় মাত্র। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি আসামিরা খালাস পাবে।’
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রায়ের তারিখ ধার্য হওয়ার পর অভিজিতের ছোট ভাই অনুজিৎ রায় সাংবাদিকদের জানান, আমরা আশা করব, নিরপরাধীরা যেন শাস্তি না পায়, আর প্রকৃত অপরাধীরা যেন সাজার আওতায় আসে। আমরা চাই, অভিজিতের প্রকৃত হত্যাকারীদের শাস্তি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। ওই ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
২০১৯ সালের ১ আগষ্ট মাসে পলাতক বরখাস্তকৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত ২১ জানুয়ারি মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
গত ২৭ জানুয়ারি কারাগারে থাকা চার আসামি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। দুই আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেননি। মামলাটিতে চার্জশিটভূক্ত ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।