১০ জুলাই ২০১৪, সাও পাওলোর নিও কিমিকা অ্যারেনায় সেদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নামছিল, পাল্লা দিয়ে যেন বাড়ছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উৎকণ্ঠাও। বিশ্বকাপ ফাইনাল হবে তো? না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো থামতে হবে এক ধাপ আগেই! নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলাটা গড়াল পেনাল্টি শুটআউটে। উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা তখন তুঙ্গে। চতুর্থ পেনাল্টিটা নিতে এলেন ম্যাক্সি রদ্রিগেজ। তিনি শটটা নিলেন বামপাশে, অনভিজ্ঞ ইয়েসপার সিলেসেন লাফ দিলেন একই দিকে, শটটা লাগল বারপোস্টে, একটা হার্টবিট মিস হলো তাতে। তবে পরক্ষণেই বলটা জালে জড়ানোর দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হতেই উৎকণ্ঠা রূপ নিলো পরমানন্দে।
আর্জেন্টাইন উৎসবের প্রায় কেন্দ্রবিন্দুতেই চলে এলেন ম্যাক্সি রদ্রিগেজ। পরোক্ষ অবদান অনেকেরই থাকতে পারে, কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়ার আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলার প্রত্যক্ষ নায়ক যে বনে গেছেন ‘ম্যাক্সি’!
আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে গোল খুব বেশি নেই তার, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে সেটা হওয়ার কথাও নয় তার। তবে ৪৫ ম্যাচে ১৫ গোল বলছে, কাজটা নেহায়েত মন্দও করতেন না তিনি। সেই ১৫ গোলের একটা আবার ছিল বিশ্বকাপের নকআউটে। ২০০৬ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে মেক্সিকোর বিপক্ষে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে তার গোলই আর্জেন্টিনাকে তুলে দিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। আলবিসেলেস্তেদের বহুবার আনন্দে ভাসানো সেই ম্যাক্সি রদ্রিগেজই এবার অশ্রুসজল চোখে বিদায় জানালেন ফুটবলকে।
বয়স চল্লিশ পেরিয়ে গেছে, তবু খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগে। ‘বিদায়’ বিষয়টাকে তীব্রভাবে এড়াতে চাইতেন, কিন্তু শেষমেশ সেটা আর হলো কোথায়! বিদায়ই যে জগতের ধ্রুব সত্য! ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি বললেন, ‘একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে এমনটা ঘটুক, এটা কখনোই চাইনি আমি।’
এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফুটবলকে আর তার দেওয়ার কিছু নেই বলেই। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডারের ভাষায়, ‘এটা খুবই কঠিন একটা সিদ্ধান্ত। তবে একই সাথে আমি বেশ ঠাণ্ডামাথায় এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। ক্যারিয়ারে অনেক বছর হয়ে গেছে। আমি নিজের সর্বোচ্চটাই দেওয়ার চেষ্টা করেছি, নিজেকে উজাড় করেই দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন আর আমার দেওয়ার কিছু নেই।’
ম্যাক্সি রদ্রিগেজ জানালেন, স্ত্রী না থাকলে এমন অবিশ্বাস্য একটা যাত্রা সম্ভবও হতো না তার। এবার স্ত্রী গ্যাব্রিয়েলাকে সময় দেওয়ার পালা। বললেন, ‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলেই আমি নতুন রোমাঞ্চের খোঁজে বেরিয়েছিলাম। সেই ছিল যে ইউরোপে আমার সঙ্গে শুরু থেকেই ছিল। খারাপ সময়ে পাশে ছিল, সেই একমাত্র আমাকে সাহায্য করেছিল, কখনো তার কাছ থেকে শূন্য হাতে ফিরিনি।’
খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি খেলেছেন নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ, এস্পানিওল, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, ও লিভারপুলের হয়ে। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলকে তো বটেই, তার সব ক্লাবকেও বিদায়বেলায় ধন্যবাদ জানান এই কিংবদন্তি। সঙ্গে সব কোচ, সতীর্থদেরও কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি তিনি।
তবে আর্জেন্টিনা আর নিওয়েলসকে রাখলেন একটু আলাদা করে। বললেন, ‘আমি আর্জেন্টাইন জাতীয় দল আর নিওয়েলসের জার্সি দুটোকে পাগলের মতো ভালোবাসি। আমি ভাগ্যবান, কারণ তাদের জার্সি আমি অনেক লম্বা সময় ধরে উপভোগ করার সুযোগটা পেয়েছি।’
এরপর কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘এতটাই লম্বা, যে আমার মেয়েরা পর্যন্ত এই জার্সি পরে আমাকে খেলতে দেখেছে, বিশ্বকাপে খেলতে দেখেছে, নিওয়েলসের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছে…’
বিএসডি/এসএসএ