ক্রীড়া ডেস্ক,
করোনাকালীন সময়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। নিউ নরমালে প্রথমবার যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বাংলাদেশ সফরে এলো, তার আগে খুঁটিনাটি সব দিক পর্যবেক্ষক আর পর্যালোচনা করে যায় ক্যারিবীয়রা। এরপর সংক্ষিপ্ত সফরে এলো শ্রীলঙ্কা। ততদিনে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তবে এবার অস্ট্রেলিয়া যে সব প্রস্তাব রেখেছে, তা অতীতের সব ইতিহাসকে ছাপিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মাঠের লড়াই খুব বেশি দেখা যায়নি। দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ নয় একেবারেই। সর্বসাকুল্য ৩টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে দুই দল। দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে সবশেষ মুখোমুখি হয়েছে ২০১১ সালে। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের মধ্যে এখনো কোনও সিরিজ খেলেনি এই দুই দল।
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সবশেষ মুখোমুখি হয়েছে ২০১৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। ২০২০ সালের সূচিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা ছিল অজিদের। কিন্তু করোনাভাইরাস জনিত কারণে সে সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া। বাণিজ্যিক কারণে এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজ খেলতে অনাগ্রহ দেখায় তারা। তবুও ২০১৭ সালে একবার টেস্ট সিরিজ খেলতে এ দেশে এসেছিলেন স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নাররা।
এটিই দুই দলের দ্বিপাক্ষিক সিরিজের শেষ স্মৃতি। প্রায় চার বছর পর আবার বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। এজন্য শর্তের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মাথায়। দীর্ঘদিন পর অজিদের সঙ্গে সিরিজ খেলতে সব শর্তই মাথা পেতে নিয়েছে বিসিবি। মিচেল স্টার্কদের নিয়ে আসতে, তাদের সবকিছুতে ‘হ্যাঁ’ টাইগার বোর্ডের।
১০ দিনের সংক্ষিপ্ত সফর করতে কয়েকমাস ধরেই দফায় দফায় বৈঠক চালাচ্ছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আসতে টালবাহানার কমতি নেই অজিদের। তাদের এদেশে আনতে নিজেদের সাধ্যের সবই উজাড় করে দিয়েছে বিসিবি।
এর কারণও আছে বৈকি। বোর্ডের উচ্চপদস্থ এক কর্তা যেমন বলছিলেন, দেশে করোনাভাইরাসের যেমন ঊর্ধ্বগতি, আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন পূর্বের রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে আনতে পারা বেশ বড় ব্যাপার। এ অবস্থায় অজিদের আনা গেলে আগামীতে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডকেও সহজে রাজি করানো যাবে। এজন্যই অজিদের সব প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বিসিবির।
কাগজকলম বিসিবিকে বেশকিছু শর্ত দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। যেগুলো হলো; যে হোটেলে অজি দলকে রাখা হবে, সে হোটেলে দুই দলের ক্রিকেটার, ম্যাচ অফিশিয়াল এবং স্টাফ ব্যতীত অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ব্যয়বহুল হলেও তেমনই একটি হোটেল প্রস্তুত করে রেখেছে বিসিবি। অজিদের চাওয়া মতে সিরিজের পাঁচটি ম্যাচই হবে হোম অব ক্রিকেট মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। যেখানে থাকবে না দর্শক উপস্থিতি।
ছাড়াও ইমিগ্রেশন ছাড়াই সরাসরি হোটেলে উঠবে অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটাররা। বিমান থেকে নেমে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের পর সোজা টিম হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে চলে যাবে। এসব শর্ত মোটামুটি সবারই জানা। সঙ্গে অজিদের চাওয়া অনুযায়ী সিরিজ শুরুর অন্তত ১০ দিন আগেই কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে সিরিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল সদস্যকে। সেটিও মেনে নিয়েছে বিসিবি।
এই ১০ দিনে চারটি করোনা ভাইরাস টেস্ট হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এরপর দুই দেশের ক্রিকেটাররা আসলে প্রায় প্রতিদিনই একবার করে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে কেউ পজিটিভ প্রমাণিত হলে সুরক্ষা বলয় ছাড়তে হবে। হোটেলে থাকার কোনও সুযোগ নেই। এরই মধ্যে একজন ম্যাচ অফিশিয়াল ও একজন গ্রাউন্ডসম্যান পজিটিভ হয়েছেন। সিরিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পার না তারা।
অস্ট্রেলিয়া দল মাঠের যে ফটক ব্যবহার করবে, সে ফটক এবং স্থান সুরক্ষা বলয়ের বাইরে থাকা সবার জন্য ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই শর্তে বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছে বিসিবি কর্তাদের। এমনকি খোদ বোর্ড পরিচালকরাও বিসিবির মূল ফটক ব্যবহার করতে পারবেন না। নিজ কার্যালয়ে যেতে আগে লিফট ব্যবহার করলেও সিরিজ চলাকালীন সে সুবিধাও হারাতে হচ্ছে বোর্ড পরিচালকদের।
বিএসডি/আইপি