আপনার বিল্ডিংয়ে একজন করোনা রোগী শনাক্ত হলে আপনার করনীয় জেনে নিন-
১) বিল্ডিং ছেড়ে অন্যত্র যাবার কথা চিন্তা করবেন না৷ কারণ, যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তার শরীরে জীবাণু ঢুকেছে ৫ থেকে ৭ দিন আগে৷ এবং তখন থেকেই, তার মাধ্যমে অন্যদের শরীরেও জীবাণু ঢুকে থাকতে পারে৷ সুতরাং যার শরীরে জীবাণু ঢূকে গেছে, তিনি নিজ বিল্ডিংয়ে থাকুন বা অন্য কোথাও যান, রোগ তার হবেই৷ বরং তিনি অন্য কোথাও যাওয়া মানে, সেই জীবাণু আরেক বাড়ীতে বহন করে নিয়ে যাওয়া৷
২) আপনি যদি গত ৫ – ৭ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকেন, যেমন: একই সাথে লিফটে ওঠা-নামা, একসাথে দোকানে যাওয়া, নিজেদের মধ্যে টাকা লেনদেন করা, একসাথে সিগারেট খাওয়া, বাসায় ইফতার বা অন্য খাবার আদান প্রদান করা ইত্যাদি, তাহলে আপনার পরিবারও ১৪ দিনের জন্য কোয়ারিন্টিনে থাকবেন৷ এটা বিল্ডিংয়ের অন্যদের সুস্হতা এবং রোগ না ছড়ানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
৩) আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি সবাই সাহায্য, সহযোগীতা এবং সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন – যেন ঐ পরিবারটি সর্বোচ্চ নিখুঁতভাবে আইসোলেশনে থাকতে পারে এবং শক্ত মনোবল নিয়ে করোনাকে মোকাবেলা করতে পারে৷
৪) আক্রান্ত পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ, খাবার এবং ঔষধ তাদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে৷ তবে হাতে হাতে দেয়া নেয়া করা যাবেনা৷ জিনিষগুলো রেখে কলিংবেল বাঁজিয়ে চলে আসবেন৷ এসব কেনাকাটার বিল যা হবে, সেই টাকা অন্যরা পরিশোধ করবেন৷ পরবর্তীতে বিকাশ বা অন্য কোন মাধ্যমে ফেরৎ নিয়ে নেবেন৷ কেননা, আক্রান্ত পরিবারের টাকার মাধ্যমে ভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
৫) আক্রান্ত পরিবারের ময়লা বড়ো পলিথিনে ভরে, মুখ ভালোভাবে বেঁধে, তারা দরজার বাইরে রাখবেন৷ যিনি ময়লা ফেলার দায়িত্বে আছেন, তিনি প্রথমে সেই ময়লার ব্যাগে জীবানুনাশক স্প্রে করবেন৷ তারপর আরেকটি বড়ো পলিথিনে ঐ ব্যাগটি ঢুকিয়ে …. নিয়ে আসবেন৷
৬) আক্রান্ত পরিবারের ফ্ল্যাটের মেইন দরজার হাতল, কলিং বেল সুইচ, দুই ফ্ল্যাটের মধ্যকার লবি এবং কমন স্পেস প্রতিদিন কয়েকবার জীবাণুনাশক দিয়ে মুঁছতে হবে৷
৭) বেড়ালের করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে৷ অর্থাৎ শুধু মানুষ না, আক্রান্ত বেড়ালের মাধ্যমেও করোনা ছড়ায়৷ সুতরাং বিল্ডিংয়ে বেড়াল থাকলে, সেগুলোর অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে হবে৷
৮) একই রকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং সহযোগীতা কোয়ারিন্টিনে থাকা পরিবারগুলোর জন্যও নিশ্চিত করতে হবে৷ এটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব কোয়ারিন্টিনে থাকা, যারা গত এক সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গিয়েছেন৷
একই রকমভাবে, আক্রান্ত ব্যক্তিরও অবশ্য কর্তব্য সবাইকে তার করোনা পজিটিভ হবার খবর জানানো, যারা গত সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তার সংস্পর্শে এসেছেন৷ এবং সংস্পর্শে আসা সবাই যেন কোয়ারিন্টিনে যান, এই অনুরোধ করা
৯) যখন আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত হয়েছেন, আইসোলেশনে গিয়েছেন এবং অন্য সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছেন…. তখন অন্তত তার কাছ থেকে অন্যদের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ তাই আসুন, আতঙ্কিত না হয়ে আমরা সুবিবেচক এবং দায়িত্বশীল আচরন করি৷ সেটাই সবার জন্য কল্যাণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে৷
লেখক- ডা: এজাজ বারী চৌধুরী
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ও প্রধান
ডায়াবেটিস কেয়ার ইউনিট
মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসেস লি.