বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেছেন, আমলা ও আমলানির্ভর এই সরকার চরম বেপরোয়া ও বাড়াবাড়ি আচরণ করছে। রিপোর্টে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরায় আমলা ও আমলানির্ভর সরকারের হাতে চরম হেনস্তার শিকার হয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। আমলাদের বাড়াবাড়ি ও বেপরোয়া আচরণের শিকার হয়েছেন অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক ও খাবার চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করা ফরিদ আহমেদ।
আজ রোববার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন।
সংরক্ষিত নারী আসনের এই সাংসদ বলেন, ‘করোনার শুরুতেই মাস্ক, পিপিই, সুরক্ষা সরঞ্জাম, টেস্টের জালিয়াতি, কেনাকাটায় লুটপাটের খবর আমাদের সামনে নিয়মিত এসেছে। সম্প্রতি ভয়ংকর দুর্নীতির খবর এসেছে স্বাস্থ্য খাতে জনবল নিয়োগ নিয়েও।
করোনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে হেলথ টেকনিশিয়ান নিয়োগে মাথাপিছু ১৫/২০ লাখ টাকা দুর্নীতির বীভৎস খবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায়। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম যখন ‘‘এখন এক কোটি দেব, পরে আরও পাবেন’’, ‘‘৩৫০ কোটি টাকার জরুরি কেনাকাটায় অনিয়ম’’, ‘‘পড়ে আছে জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী’’, ‘‘কিটের ঘাটতি নিয়ে দুই রকমের তথ্য’’, ‘‘উৎপাদনের নয়, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিটি গোপনীয়তার’’ শিরোনামে নানা রিপোর্ট করে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরেছেন, তখন আমলানির্ভর সরকারের হাতে চরম হেনস্তার শিকার হন। মানুষের চিন্তা, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের স্বার্থে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
সাংসদ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাঁরা ছয় ঘণ্টা সাংবাদিক রোজিনাকে আটকে রেখে অপদস্ত করেছেন, তাঁদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে বারবারই সংখ্যার ওপর জোর দেয়। কোনো গণমাধ্যমের ওপর যদি সত্য রিপোর্ট প্রকাশের জন্য নানা ধরনের নিবর্তন নেমে আসে, তখন কোনো গণমাধ্যমই আর স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না, তা সে সংখ্যা যা–ই হোক না কেন। আর সে কারণেই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ক্রমাগত পেছাতে পেছাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। মিয়ানমার, আফগানিস্তান এমনকি উগান্ডাও বাংলাদেশের ওপরে।
বিরোধীদলীয় এই হুইপ বলেন, ‘আমলাদের বাড়াবাড়ি আমরা সুলতানা সরোবর নামকরণের সময়ই দেখেছিলাম। বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক সেই খবর প্রকাশ করলে শারীরিক নির্যাতনের পর মোবাইল কোর্ট দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। অথচ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট অসাংবিধানিক।’
রুমিন ফারহানা বলেন, হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে মহাবিপদে পড়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফরিদ আহমেদ। তিনি চারতলা বাড়ি এবং একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক, এমন তথ্যের ভিত্তিতে ইউএনও ৩৩৩ নম্বরে কল করে অযথা হয়রানি ও সময় নষ্ট করার দায়ে ফরিদ আহমেদকে শাস্তি হিসেবে ১০০ গরিব লোকের মধ্যে
খাদ্যসহায়তা বিতরণের নির্দেশ দেন। এটা না করতে পারলে জেলে যেতে হবে, এই ভয়ে তিনি স্ত্রীর অলংকার বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণ করে ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করে খাদ্যসহায়তা করতে বাধ্য হন। এই ঘটনায় এক ইউএনও কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছাড়াই তাঁকে শাস্তি দেওয়া এবং অতি ক্ষমতাশালী আমলাতন্ত্র এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যাচ্ছেতাই করার জন্য। তিনি বলেন, ফরিদের একটি ছোট হোসিয়ারি কারখানা ছিল। পৈতৃক চারতলা বাড়িটি ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে ভাগ হওয়ার পর তাঁর ভাগে পড়েছে মাত্র তিনটি কক্ষ। এর মধ্যেই তিনি পরিবার নিয়ে চলছিলেন। কিন্তু করোনার সময় তিনি হোসিয়ারি কারখানাটি আর চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে একটি হোসিয়ারি কারখানায় কর্মচারীর কাজ করতে শুরু করেন তিনি। স্ত্রী, কন্যা আর এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পুত্র নিয়ে তাঁর দিন আর চলছিল না। করোনা তাঁকে খাদ্যের কষ্টেরই মুখোমুখি করেছে।