নিজস্ব প্রতিনিধি:
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহা. শফিকুল ইসলামকে আরও এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখার উপসচিব মো. অলিউর রহমান প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী মোহা. শফিকুল ইসলামকে তার অবসরোত্তর ছুটি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থগিতের শর্তে আগামী ৩০ অক্টোবর অথবা যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছর মেয়াদে ডিএমপি কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা হলো। এ নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্রের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।’
২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ডিএমপির ৩৪তম কমিশনার হিসেবে শফিকুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয় সরকার। তার চাকরির বয়স শেষে ৩০ অক্টোবর তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।
জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতামূলক পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ায় তাকে এ দায়িত্বে বহাল রাখা হয়েছে।
এদিকে, গত ১৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ অধিশাখার উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের সই করা প্রজ্ঞাপনে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পান মোহা. শফিকুল ইসলাম।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক গ্রেড-২ পদের বিপরীতে গ্রেড-১ এর দুটি সুপারনিউমারারি পদ (অবসর, অপসারণ কিংবা অন্য কোনো কারণে পদশূন্য হলে বিলুপ্তির শর্তে) অস্থায়ীভাবে রাজস্বখাতে সৃজনের সরকারি মঞ্জুরি প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, ডিএমপিতে দুবছর দায়িত্ব পালনকালে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা লিপিবদ্ধতে হয়রানিরোধে সিনিয়র অফিসারদের তত্ত্বাবধানে জিডি ও মামলার বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং সেল গঠন করেন মোহা. শফিকুল ইসলাম। ফলে সঠিকভাবে জিডি ও মামলা তদন্তে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়।
এছাড়া নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অনলাইন জিডি চালুসহ প্রতিটি থানায় স্থাপিত নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের কার্যক্রমে গতি আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, উন্নত দেশের উপযোগী করে ডিএমপিকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন মোহা. শফিকুল ইসলাম। তার সুচিন্তিত পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও গতিশীল নেতৃত্বের ফলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য ইতিহাস হয়ে থাকবে।
অষ্টম ব্যাচের এ কর্মকর্তা ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়।
তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রামের রেঞ্জ ডিআইজি ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তিনি অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এইচআরএম শাখার প্রধান ও সিআইডি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান কমিশনারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে থেকেই নতুন কমিশনার হওয়ার জন্য একাধিক কর্মকর্তা তদবির করছিলেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কাকে রেখে কাকে কমিশনার পদে পদায়িত করবেন, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
তুলনামূলক ঊর্ধ্বতন ব্যাচের কর্মকর্তাদের রেখে নিচের ব্যাচের কোনো কর্মকর্তাকে কমিশনার পদে পদায়িত করা হলে বাহিনীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও আলোচনা চলছে। এ কারণে বর্তমান কমিশনার শফিকুল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া অথবা ১২তম ব্যাচের কাউকে এ পদে পদায়িত করা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছিলো। তবে শেষপর্যন্ত শফিকুল ইসলামকে কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলো সরকার।
বিএসডি / আইকে