কোপা আমেরিকার আয়োজন নিয়ে সংশয় থামছেই না!
গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে সেটি পিছিয়ে এই বছরে আনা হয়েছে। কিন্তু আগামী ১৩ জুন টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার দিন যত ঘনিয়ে আসছে, দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের আসরটি নিয়ে সংশয় যেন তত বাড়ছে। আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া দুই দেশ মিলে টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা ছিল। দেশের ভেতরের সহিংস আন্দোলনের কারণে সেখান থেকে কলম্বিয়াকে সরিয়ে দেয় দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। এখন আর্জেন্টিনা এককভাবে পুরো টুর্নামেন্ট আয়োজন করার কথা উঠছে।
কিন্তু এখানেও ঝামেলা! আর্জেন্টিনায় করোনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আর এ সময়ে এমন টুর্নামেন্ট আর্জেন্টিনাতে আয়োজনের বিপক্ষে আর্জেন্টিনারই মানুষ। একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত সেই জরিপের ফলে দেখা যায়, ৭০ শতাংশ আর্জেন্টাইনই এ সময়ে কোপা আমেরিকা আর্জেন্টিনায় আয়োজনের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
পোলটি চালিয়েছে পোলিয়ারকুইয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান। রাজধানী বুয়েনস এইরেসের ১২৭৪ জন মানুষের ওপর চালানো সেই জরিপে ৭০ শতাংশ মানুষই মত দিয়েছেন এই বলে যে আর্জেন্টিনার উচিত কোপা আমেরিকার আয়োজন থেকে নাম সরিয়ে নেওয়া। ২০ শতাংশ মানুষ অবশ্য কোপা আমেরিকা এখনই আর্জেন্টিনায় হওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। বাকি ১০ শতাংশ কোনো নির্দিষ্ট মত দিতে পারেননি।
আর্জেন্টিনা আর কলম্বিয়ার যৌথ আয়োজনে এবারের টুর্নামেন্টটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কলম্বিয়ায় সরকারবিরোধী সহিংস আন্দোলন চলছে, অনেক মানুষ মারা গেছে সেখানে। সে কারণে গত সপ্তাহে কনমেবল কলম্বিয়ার কোপা আমেরিকা আয়োজনের স্বত্ব কেড়ে নেয়। কলম্বিয়ার সরকার অবশ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছিল। কোপা আমেরিকা আরও দু-তিন মাস পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধও করেছিল কলম্বিয়া।
কিন্তু এরই মধ্যে এক বছর পিছিয়ে আসা কোপা আরও পেছালে ফুটবলের সূচিতে ঝামেলা হতে পারে, সে কারণে কনমেবল সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। করোনার কারণে শুধু তো কোপা নয়, দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের অনেক ম্যাচই এখনো হতে পারেনি।
কিন্তু কলম্বিয়ার কোপা আমেরিকা আয়োজনের স্বত্ত্ব কেড়ে নেওয়ার পর থেকে প্রশ্ন ওঠে, কলম্বিয়ায় টুর্নামেন্টের যে ১৫টি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো কোথায় হবে? প্যারাগুয়ে ও চিলি আগ্রহ দেখিয়েছিল কলম্বিয়ার বিকল্প হওয়ার। তবে আর্জেন্টিনাতেই টুর্নামেন্টের পুরোটা আয়োজনের কথাই বেশি আলোচনায়। এর মাঝে গুঞ্জন উঠেছিল, দুই দেশের কোথাও নয়, টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এই আলোচনার মধ্যেই গত কিছুদিনে কনমেবলের কর্মকর্তারা আর্জেন্টিনার কয়েকটি ভেন্যু পরিদর্শন করে গেছেন।
এখন ঝামেলা বেধেছে আর্জেন্টিনার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে। ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষের দেশটিতে করোনার এখন সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে।
গত বৃহস্পতিবারের তথ্য, সেদিন নতুন করে ৪১ হাজার ৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এঁদের নিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হলেন প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ! আর গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন ৫৫১ জন, এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৬ হাজারের বেশি। এই মুহূর্তে ৯ দিনের লকডাউন চলছে দেশটিতে।
কোপা আমেরিকার আর ১৫ দিন বাকি। আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্লা ভিজ্জোত্তির কথা, করোনার এই ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে মহাদেশটির বিভিন্ন দেশ থেকে ১০০০ থেকে ১২০০ মানুষের দেশে ঢোকা ‘মহামারির নিয়মকানুনের সঙ্গে মোটেও যায় না।’
এ-ই যখন অবস্থা, পুরো টুর্নামেন্ট তাদের দেশে আয়োজনের ক্ষেত্রে আর্জেন্টাইন সরকার গত বুধবার কনমেবলকে কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে। করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে কঠিন অনেক শর্ত পালন করা সম্ভব হলেই শুধু কোপা আমেরিকা পুরোটা আর্জেন্টিনায় হওয়া সম্ভব বলে জানিয়ে দিয়েছে তারা।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বুয়েনস এইরেসের কর্মকর্তারা কনমেবল থেকে কোনো জবাব পাননি বলে জানিয়েছেন। আর্জেন্টিনার শর্তের মধ্যে ছিল, দলগুলোর সঙ্গে আসা বাড়তি লোকের সংখ্যা কমানোসহ আরও অনেক কড়া নিয়ম। টুর্নামেন্টটা দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই যে হচ্ছে, তা আগেই নির্ধারিত ছিল।
টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে কনমেবল অবশ্য খেলোয়াড়দের ভ্যাকসিন দেওয়াতে শুরু করেছে। তবে তারা দিচ্ছে চীনের করোনাভ্যাক টিকা, যেটি আবার এখনো আর্জেন্টিনায় অনুমোদন পায়নি। ভিজ্জোত্তি বলেছেন, টুর্নামেন্টের ১৫ দিন আগে এসে সবাইকে টিকা দেওয়ানো কোনো কাজের কথা নয়। বরং এখানে করোনা ছড়ানোর উপায় বন্ধ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মত ভিজ্জোত্তির।