নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
শীতে গ্রামবাংলার জনজীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের রস। খেজুর রসের মাটির ঘটিতেই যেন আসে শীতের আগমনী বার্তা। শীত এখনো না নামলেও শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছ পরিচর্যার কাজ। ঝিনাইদহের গাছিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এ কাজে। আগামী ৪ মাস চলবে রস সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ।
ঝিনাইদহ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ১৫ হাজার ৭শ ৫২ জন খেজুর গাছি ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় গাছ কাটা শুরু করেছেন। জেলায় এ বছর ১ লাখ ১৩ হাজার ৪শ ১৫টির বেশি খেজুর গাছ থেকে ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮শ ২৫ লিটার রস এবং ৫শ ৮০ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টনের বেশি গুড় পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সদর উপজেলায় খেজুর গাছ আছে ৪৭ হাজার ৩শ ৮০টি। কালীগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার, কোটচাঁদপুরে ২০ হাজার ২২৫, মহেশপুরে ১০ হাজার ৮শ ৯০, শৈলকুপায় ১৪ হাজার ৩শ ৪৫ এবং হরিণাকুন্ডুতে ৯ হাজার ৫শ ৫০টি খেজুর গাছ রয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের আবু তালেব প্রতি বছর খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন। এক সপ্তাহ ধরে সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি তালেব ছুটে চলেছেন এক গাছ থেকে অন্য গাছে। গ্রামের একমাত্র গাছি তিনি। বয়সের ভারে গাছে উঠতে কষ্ট হলেও রস ও গুড় বিক্রি করে সামনের ৬ মাস চলার আশায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তিনি।
আবু তালেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘৩০ বছর ধরে খেজুরের গাছ কেটেই বছরের ৬ মাস সংসার চালাই। এ বছরও ১২০টির বেশি খেজুরের গাছ তোলার (পরিচর্যার) কাজ শুরু করেছি।
তিনি জানান, ১০ ঠিলে (কলস) রস থেকে এক ঠিলে গুড় হয়। একটি গাছ থেকে এক সিজনে ১২০-১৪০ ঠিলে রস পাওয়া যায়। শীতের ভোরে যেমন রসের কদর আছে, তেমনি গুড়ের কদরও কম নয়। এক ঠিলে রস ১২০ টাকা করে বিক্রি হয়। অন্যদিকে এক কেজি নলেন গুড়ের দাম ১৮০-২০০ টাকা। এখন এক ঠিলে গুড় বিক্রি হয় হাজার-১২শ টাকায়।
এই গ্রামের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, শীতের সময় তাদের বন্ধুরা রস খেতে গ্রামে আসে। শহরের কিছু বন্ধু খাওয়ার আগে জানত না এই রস এত মজার।
কোটচাঁদপুর উপজেলার গাছি আব্দুল কাদের বলেন, ‘গ্রাম বাংলার সম্ভাবনাময় খাত এটি। সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমানে এ পেশার লোকজন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। আবার এই কাজে কঠোর পরিশ্রম হওয়ায় গ্রামের যুবকরা আগ্রহ হারাচ্ছে। এসব কারণে আগামীতে খেজুরের রস সংগ্রহ কার্যক্রম কমে যাবে।’
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘‘মধুবৃক্ষ’ খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহ হবে সুমিষ্ট, স্বাস্থ্যসম্মত এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ রস। তাতে তৈরি হবে নলেন গুড় ও পাটালী। এই জেলা থেকে যে রস উৎপাদন হয় তার ৩০ ভাগ রস খাওয়া হয় আর বাকি ৭০ ভাগ রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়।’
তিনি জানান, জেলায় এবার রস উৎপাদানের টার্গেট রয়েছে ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ৮শ লিটার । আর গুড় উৎপাদনের টার্গেট ৫৮১ মেট্রিক টন।
বিএসডি/এফএ