স্টাফ রিপোর্টার
সরকারী ত্রাণ সামগ্রীর অনিয়ম, ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি, সোলার প্যানেল দুর্নীতি, চাকুরীর নাম করে ৩০-৩৫ হাজার করে নগদ অর্থ আদায়, ইউনিয়ন পরিষদ মেরামতে নিম্নমানের কাচাঁমালের ব্যবহার করে অর্থ আত্নসাৎ, সরকারি নির্দেশনা না থাকা সত্বেও চারিত্রিক সনদ বাবদ অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ১৩ নং বড়নাল ইলিয়াসবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মল্লিক ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে।
চেয়ারম্যানের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করলেই ইউপি সদস্যদের নাজেহাল ও হয়রানি শিকার হতে হয়। স্থানীয় প্রভাবের ফলে অনেকেই মুখ খোলেনা তার এই অভিযোগের বিরুদ্ধে। সকল আইন-কানুন আর প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলে তার অন্ধকার জগতের সফল পদচারণা।
এছাড়াও বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে মল্লিক ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে ।
জেলা প্রশাসক নড়াইলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কালিয়া উপজেলার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ২৬৫ মে.টন চাউল। নগদ ১০ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা, এবং শিশু খাদ্য বাবদ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। জেলা প্রশাসক নড়াইল এবং কালিয়া উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হুদা মুঠোফোনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।কালিয়ার ১৪ টি ইউনিয়নে জনসংখ্যার এবং চাহিদার ভিত্তিতে উপ বরাদ্দ দেয়া হয় এসব চাউল এবং নগদ অর্থ।
ইলিয়াসবাদ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কাজী রাসেল আহমেদ জানান- বরাদ্দকৃত ১০ টন চাউলের ৬ টন উত্তোলন এবং বিতরণ কার্যক্রম আমরা শেষ করেছি। বাকি ৪ টন হতে নতুন করে ২ টন উত্তোলন করা হয়েছে। নগদ ২০ হাজার টাকার তথ্যও তিনি অবগত নন। প্রসঙ্গক্রমে সচিব রাসেল জানান- এসব টাকা রয়েছে মল্লিক ফিরোজ চেয়ারম্যানের কাছেই।
কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। ইলিয়াসবাদের ৯ টি ওয়ার্ড এবং (সংরক্ষিত তিন মহিলা সদস্য) মোট ১২ সদস্যদের মাঝে বিতরণ হয়ে যাওয়া ৬ টন চাউলের বন্টন সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য ইমরান জানান- প্রচুর চাহিদা থাকা সত্বেও আমি শুধুমাত্র ২০টি পরিবারকে চাউল দিতে পেরেছি। প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাউল দেবার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা যায় ৮-৯ কেজি করে দেয়া হয়৷ বিষয়টি নিজেও স্বীকার করেছেন ৫ নং ওয়ার্ডের এই সদস্য। যার সংরক্ষিত কল রেকর্ড রয়েছে অনুসন্ধানী টিমের কাছে। নগদ অর্থ এবং শিশু খাদ্য সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান- এসবের কিছুই আমাকে দেয়া হয়নি এবং আমি অবগতও নয়। ওয়ার্ড ভিত্তিক বরাদ্দকৃত চাউলের হিসাব চাইলে তিনি বলেন আমি সর্বোচ্চ ২০০ কেজি চাউল পেয়েছি। তার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ জনসংখ্যা অনুপাত না দেখেই তার ইচ্ছামত তৈরি করেন স্বজনপ্রীতির কালো ছক।
তিনি আরও জানান জনসংখ্যা এবং চাহিদা অনুযায়ী ৭ নং ওয়ার্ডে চাহিদা বেশি থাকলেও এদিকে তার মাথাব্যাথা নেই। কাউকে পরোয়া না করেই ইচ্ছা মত এসব অসম বন্টনের কালো অধ্যায় জন্ম দেন ফিরোজ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুদা জানান- আমার কাছে অভিযোগ আছে ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ চাহিদা না থাকা সত্বেও তার নিজের এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডে অবৈধভাবে বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। এ কারণে পরবর্তীতে আমি ৪ নং ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ স্থগিত করেছি।
এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি, ইউপি সদস্য আনিস, ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য পলাশ মল্লিক , ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য মাগরীব আলী,৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য ওয়াহাব জানান – আমরা চরমভাবে বৈষম্যের শিকার।
তাদের ভাষায় এলাকার অনেক মেম্বারই এই বৈষম্যের শিকার, কিন্তু কতিপয় সদস্যদের মাঝে চাহিদা কম থাকা সত্বেও দেয়া হয় বেশি বরাদ্দ। এলাকার ইয়ামিন মেম্বার এবং সুলতানা মেম্বারকে দেয়া হয় পর্দার আড়ালের বিশেষ এই সুবিধা।
অনুসন্ধান উঠে এসেছে আরও অবাক করা তথ্য সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য সুলতানা জানান- ১২ জন সদস্যদের মাঝে সংরক্ষিত ৩ টি মহিলা আসনের জন্য -২০০ কেজি করে চাউল দেয়া হয়। জানানো হয়নি উপজেলা হতে প্রাপ্ত অর্থ সম্পর্কেও।
এদিকে ইউপি সচিব রাসেলের দেয়া তথ্য মতে ৬ টন চাউলের মাঝে ১২ জন মেম্বারকে দেয়া সর্বোচ্চ ২০০ কেজি করে হলেও ২৪০০ কেজি। এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু কৃষ্ণপদ ঘোষের তত্বাবধানে এলাকার দোকানদারদের দেয়া কিছু চাউলের ভারসাম্যহীন হিসাব দেখালেও মেলেনি বাকি প্রায় ২,৬০০ কেজি চাউলের হিসাব।
ইউপি সচিব বলেন এসব সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানিনা তবে ৬ টন চাউল বিতরণ শেষ এটা নিশ্চিত। বাকি ২,৬০০ কেজির হিসাব রয়েছে ভিন্ন জগতের কাছে। যদিও ইউপি সচিব হিসেবে এসব তথ্য তার জানার কথা। নগদ ২০ হাজার টাকা সম্পর্কেও অবগত নয় তিনি।
যেহেতু ইউপি সদস্যদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২০০×১২= ২৪০০ কেজি চাউলের বাইরে আর কেউ ই কোন ভাবে ত্রান পায়নি সেহেতু প্রশ্ন গভীর হতে থাকে। আমরা কি তবে খোলাফায়ে রাশেদীনের হযরত ওমরকে পেয়েছি ? যে রাতের আধারে খাবার পৌছে দিয়েছেন নিজ কাঁধে। কিন্তু কই এলাকাবাসী বলে ভিন্ন কথা। তাদের ভাষায় তারা ওমর পাইনি পেয়েছে তারা বিপরীত, নিজের কাছে ২,৬০০ কেজি চাউল থাকলেও কেউ ই এই সুবিধা পাইনি। তবে কোথায় এসব চাউল? কালিয়ার পেড়লী ইউনিয়নে পহেলা মে’ তে গ্রেফতার হওয়া জারজিদ চেয়ারম্যানের মত নয়তো? নাকি গল্পটা অন্য। আপাতদৃষ্টিতে মানবিক কিন্তু দেয়ালের আড়ালে ভয়ানক চিত্র। ভয়ংকর লোক দেখানো ভূয়া মাস্টার রোলের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের দেয়া এসব অপরাধের তথ্য- প্রমান সংরক্ষিত রয়েছে অনুসন্ধানী টিমের কাছে।
এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজকে কল করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷ তার পরিবারের কাছে কল দিলে তারা ফোন রিসিভ করেনি।