ইয়েমেনে সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নতুন করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ এই হামলায় হুথিদের ক্রুজ মিসাইল ও জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রকে লক্ষ্যবস্তু করেছে দেশটি।
হুথিদের ৩৬ টি লক্ষ্যবস্তুতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ হামলার একদিন পর এই হামলার ঘটনা ঘটল। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ইয়েমেনে হুথি ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আরও হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)। এক বিবৃতিতে সেন্টকম বলেছে, মার্কিন বাহিনী একটি স্থল-আক্রমণকারী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং চারটি জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রকে আঘাত করেছে।
‘লোহিত সাগরে চলাচলরত জাহাজগুলোতে হামলা চালাতে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল’ বলেও জানিয়েছে সেন্টকম।
বিবিসি বলছে, হুথিদের লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিন-যুক্তরাজ্যের যৌথ হামলার একদিন পর সর্বশেষ এই হামলার ঘটনাটি ঘটল। লোহিত সাগরে সামরিক ও বাণিজ্যিক জাহাজে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর ক্রমাগত আক্রমণের জবাবে মার্কিন বাহিনী বেশ নিয়মিতই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
মূলত হুথিদের আক্রমণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে বেশ ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এমনকি হামলা থেকে বাঁচতে প্রধান প্রধান বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানিগুলোও লোহিত সাগরের জলপথ এড়িয়ে চলতে বাধ্য হয়েছে।
মিসর বলেছে, সুয়েজ খাল থেকে তার রাজস্ব আয় গত জানুয়ারিতে প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। চলতি বছরের প্রথম মাসে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির মূল বাণিজ্য ধমনী দিয়ে ভ্রমণকারী জাহাজের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমে গেছে।
ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুথিদের হামলা লোহিত সাগরে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার জবাব দিয়েছে। এর বিপরীতে হুথিরা আমেরিকান এবং ব্রিটিশ স্বার্থকেও হামলার বৈধ লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এছাড়া হুথিদের বিরুদ্ধে হামলার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুজাতিক নৌ টাস্কফোর্সও গঠন করেছে যার লক্ষ্য লোহিত সাগরের ট্রানজিট রুটে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা রক্ষা করা।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিরোধী ইরানের মিত্ররাও লেবানন, সিরিয়া এবং ইরাক থেকে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু বানানোয় এতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এর মাঝেই হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় চার মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।
এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।
বিএসডি / এলএম