‘শান্তির চাকরি ছেড়ে কেন যে এই যন্ত্রণায় পড়তে গেলাম!’
নাহ্, রোনাল্ড কোমান এমন কিছু বলেছেন বলে শোনা যায়নি। যদি বলেও থাকেন, খুব বেশি দোষ দেওয়া যাবে কি? বার্সেলোনার কোচ থাকবেন কি না, সে নিয়ে চিন্তা করতে করতে ‘প্যানিক অ্যাটাক’ করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন—এমন খবর শোনা গিয়েছিল গতকাল। পরে কোমান নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন ওসব উড়োকথায় কান না দিতে। সুস্থই আছেন তিনি।
কোমান ছিলেন নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের কোচ। ভার্জিল ফন ডাইক, জর্জিনিও ভাইনালডম, মেম্ফিস ডিপাই, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংরা তাঁর অধীনে খেলছিলেনও দুর্দান্ত। তাঁর হাত ধরে নেদারল্যান্ডসের সুদিন ফিরবে—এমনটাই মনে করা হচ্ছিল।
কোমানের তখন সুদিন, চাকরি-বাকরি নিয়ে চিন্তাও করতে হচ্ছিল না। কিন্তু ওই যে, সুখে থাকতে ভূতে কিলায় বলে একটা কথা আছে তো!
আজীবন বার্সেলোনার কোচ হতে চেয়েছেন। খেলোয়াড় হিসেবে দলটার কিংবদন্তি বলা যায় তাঁকে, তাঁর গোলেই বার্সেলোনা নিজেদের ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল। দলটির সঙ্গে কোমানের তাই আত্মার সম্পর্ক।
কিকে সেতিয়েনের বিদায়ের পর বার্সেলোনা হন্যে হয়ে যখন কোচ খুঁজছিল, তখনই দৃশ্যপটে আসেন কোমান। বার্সার কোচ হওয়ার কোচ প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁকে। নিশ্চিত আরামের চাকরি ছেড়ে প্রাণের ক্লাবের টানে কোমানও তাই কোলাকুলি করেন অনিশ্চয়তার সঙ্গে। বার্সেলোনায় যখন এলেন, এমনিতেও দলের অবস্থা টালমাটাল। আর দশটা বার্সেলোনা কোচের ক্ষেত্রে যা হয়, এখন সেটাই হচ্ছে কোমানের সঙ্গেও। এক মৌসুম যেতে না যেতেই চাকরি নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন এই ডাচ্ কোচ।
সেই চিন্তার মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে লাপোর্তার সঙ্গে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার পর কোমান ‘প্যানিক অ্যাটাক’ করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। খবরটা আবার নিশ্চিত করেছেন খোদ লাপোর্তা! যদিও বার্সা সভাপতির দাবি, কোমানের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় এমন দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু বলা হয়নি, ‘আমাদের কথা হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাঁর চুক্তিতে এখনো এক বছর বাকি আছে। গতকাল স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যাওয়ায় হাসপাতালে নিতে হয়েছে, কিন্তু তিনি এখন ভালো আছেন।’
শুধু লাপোর্তাই নন, কোমানের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ক্রীড়াবিষয়ক সংবাদমাধ্যম ফক্স স্পোর্টসও। ব্যস, দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল খবরটা। নিজেকে নিয়ে গুঞ্জন থামাতে এগিয়ে আসতে হলো খোদ কোমানকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলেন, ‘সব সময় যা শুনবেন, তা বিশ্বাস করবেন না। আমি সুস্থ আছি, আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ কোমান এ কথার সঙ্গে লাপোর্তার বক্তব্যকে কি উড়িয়েও দিলেন না?
লাপোর্তা নিজেও যে কোমানকে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে চাইছেন না, সেটা গতকাল স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোমান গেলে দলে আসবে কে? যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পাচ্ছেন না বার্সা সভাপতি। আর যেহেতু পাচ্ছেন না, সেহেতু কোমানকেই কাজ চালিয়ে যাওয়ার লাইসেন্স দিয়েছেন। ফলে একটা জিনিস বোঝা গেছে, দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা ঠিক স্বাভাবিক নয়, যা আরও স্পষ্ট হয়েছে কোমানের মুখপাত্র রব ইয়ানসেনের একটা টুইটে।
কোমানের মুখপাত্র টুইট করেছেন, ‘ভেবে দেখুন, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, কিন্তু আপনাকে নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তারপর আমি আরও যোগ্য সঙ্গী খোঁজার জন্য দুই সপ্তাহ সময় নিলাম, কিন্তু কাউকে পেলাম না। তাই সেই আপনাকেই বিয়ে করলাম কাউকে না পেয়ে।’
এই ‘বিয়ে’তে যে বিয়ে করতে চাইছেন, আর যাঁকে বিয়ে করতে চাওয়া হচ্ছে বলে যাদের বোঝানো হয়েছে, সেটা যে যথাক্রমে বার্সেলোনা ও কোমান, সেটা না বলে দিলেও চলছে!