পবিপ্রবি প্রতিনিধি,
২০০০সালের ৮ই জুলাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে নব প্রস্ফুটিত হওয়া পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ ২১ তম প্রতিষ্ঠা বছরে পদার্পণ করল। দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের আশা ভরসার একটি প্রতীক হয়ে স্বমহিমায় গৌরবৌজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। দক্ষ গ্রাজুয়েট নির্মাণের মাধ্যমে হয়ে উঠেছে দক্ষিণবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলার অবস্থিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আরেকটি অনুষদীয় ক্যাম্পাস।১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পটুয়াখালী কৃষি কলেজ যা ১৯৭৯-৮০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়ে স্নাতক পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করে।২০০০ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কৃষি কলেজাটিকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ বিলুপ্ত করে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইন পাস হয় এবং ২০০২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বাস্তব রূপ লাভ করে।
প্রথমিকভাবে এর অবকাঠামো উন্নয়নে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।৭২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, এর মধ্যে ৩৫ একরের ওপর মূল ক্যাম্পাস আর এর অদূরে ৩৭ একর জমির ওপর বিশাল কৃষি গবেষণা খামার। মূল ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে বৃক্ষশোভিত সুদীর্ঘ একটি লেক রয়েছে। ক্যাম্পাসের উত্তর-পশ্চিমাংশে অত্যাধুনিক ডিজাইনের পুরুষ ও মহিলা হোস্টেল বিদ্যমান। একাডেমিক ভবন থেকে হোস্টেলে যাওয়ার পথেই মসজিদের অবস্থান। মসজিদের পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং এর উল্টো দিকে রয়েছে লাইব্রেরি ভবন।
একটি প্রশস্ত রাস্তা ক্যাম্পাসের ওপর দিয়ে পুবের পীরতলা থেকে পশ্চিমের পটুয়াখালী-বাউফল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এ সড়কের দক্ষিণ দিকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আবাসিক কোয়ার্টার আর এর দক্ষিণে রয়েছে ‘সৃজনী বিদ্যানিকেতন স্কুল এন্ড কলেজ’ নামের একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মূল ক্যাম্পাসের পুব দিকে পীরতলা বন্দর পেরুলেই ৩৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত কৃষি গবেষণা খামার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল জেলার খানপুরা বাবুগঞ্জে ১২.৯৭ একর জায়গার উপর রয়েছে এনিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ।এই ক্যাম্পাসটি বরিশাল জেলা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত।
সাগর সৈকত কুয়াকাটায় ফিশারিজ ফ্যাকাল্টি, সমুদ্র বিজ্ঞান ও ফরেস্টি বিজ্ঞানসহ তিনটি পৃথক অনুষদ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সুনাম রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। চারটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা করা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে রয়েছে মোট ৮(আট)টি অনুষদ। সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলে প্রতিটি অনুষদে।দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম ২০০২ সালে স্নাতক পর্যায়ে কৃষি শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষা চালু করা হয়। বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম উপাচার্য হিসেবে ১৭মে,২০২১ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত।
পথ চলার শুরু থেকেই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষি, মৎস্য, পশুপালন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেখে চলেছে অগ্রণী ভূমিকা। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন কৃষি প্রজাতি আবিষ্কার সহ বিভিন্ন সেক্টরে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীগণ। ৩০০০জন শিক্ষার্থী এবং ২০৯ জন একাডেমিক কর্মচারী রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্বমহিমায় এবং স্বগৌরবে শুন্য থেকে শিকড়ে পৌঁছে উঠুক পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এমনটাই সবার চাওয়া।
সাজ্জাদ/কাইয়ুম