আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন সংক্রমণের শঙ্কায় যখন দেশে দেশে সীমান্ত বন্ধ করা হচ্ছে সে সময় নিজেদের মধ্যকার স্থলসীমান্ত খুলে দিয়েছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
করোনা মহামারির কারণে প্রায় দু’বছর বন্ধ রাখঅর পর পরস্পরের মধ্যকার স্থল সীমান্ত খুলে দিল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ। তবে দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ফের বন্ধ হয়ে যাবে সীমান্ত।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মহামারি শুরুর আগ পর্যন্ত প্রতিদিন স্থলপথে সীমান্ত অতিক্রম করে মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর ও সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়ায় যাতায়াত করতেন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। স্থল সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এতদিন ভোগান্তিতে ছিলেন দুই দেশের লাখ লাখ নাগরিক।
সম্প্রতি দুই দেশের সরকারের মধ্যকার এক চুক্তির ভিত্তিতে খুলে দেওয়া হয়েছে এই সীমান্ত। সোমবার এ সীমান্ত অতিক্রম করেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোব সিঙ্গাপুর সফরে যান এবং তাকে স্বাগত জানান সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর এটি ছিল মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর।
সরকারি নতুন চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ১৫ শ যাত্রীকে স্থলসীমান্ত দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে। এই যাত্রীদের অবশ্যই করোনা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে এবং গাড়িতে ওঠার আগে র্যাপিড টেস্টে করোনা নেগেটিভ হিসেবে শনাক্ত হতে হবে।
পাশপাশি, যে দেশে যেতে ইচ্ছুক, সেই দেশের নাগরিকত্ব, স্থায়ী বসবাসের অনুমতি বা দীর্ঘ মেয়াদি ভিসা যেসব যাত্রীর রয়েছে, তাদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানিয়েছেন দুই দেশের সরকারি কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানিয়েছেন, স্থল সীমান্ত খুলে দেওয়ার চুক্তি সম্পাদনে সহযোগিতা করেছে দুই দেশে টিকাদান কর্মসূচির চিত্র। সিঙ্গাপুরে মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন। মালয়েশিয়ায় এই হার প্রায় ৮০ শতাংশ।
তবে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী খায়রি জামালউদ্দিন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ওমিক্রনের প্রভাবে যদি সংক্রমণ বৃদ্ধির লঙ্ঘণ দেখা যায়, সেক্ষেত্রে পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হবে এই সীমান্তপথ।
তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সংক্রমণ পরিস্থিতির ওপর। যদি পরিস্থিতির অবনতি হয়, সেক্ষেত্রে আবারও বন্ধ করা হবে সীমান্ত।’
মালয়েশিয়ার নাগরিক শিব কুমার (৪১) পেশায় প্রকৌশলী। সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত শিব কুমারের পরিবার থাকে মালয়েশিয়ায়। সীমান্ত খুলে দেওয়ায় প্রায় দু’বছর পর দেশে পরিবারের কাছে ফিরছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের কুইন স্ট্রিট বাস টার্মিনালে নিজের গাড়ির জন্য অপেক্ষারত শিব কুমার রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার স্ত্রী-সন্তান আমাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে। সকাল থেকে তারা একটু পর পর ফোন করে আমাকে জিজ্ঞেস করছে- আমি এখন কোথায় আছি, বাস ছেড়েছে কি না, আর কতক্ষণ লাগবে পৌঁছাতে।’
‘দুই বছর তাদের ভীষনভাবে মিস করেছি। এখন আমি শুধু বাড়ি যেতে চাই, তাদের জড়িয়ে ধরতে চাই।’