সম্প্রতি করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বৈশ্বিক এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভয়ঙ্কর এই মহামারির নিশ্চিত প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে মানুষের মনে দুশ্চিন্তা ক্রমে বাড়ছে। ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। শুধু করোনায় আক্রান্ত রোগী নয় বরং পৃথিবীর প্রায় ৯৯ ভাগ লোক মানসিকভাবেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এমন অবাক করা তথ্য দিয়েছেন খোদ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
করোনার কারণে সৃষ্ট রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ জ্বর। তাই শরীরের তাপমাত্রা একটু বেড়ে গেলেই মনের মধ্যে তৈরি হচ্ছে শঙ্কা। আপনি হয়তো তখন ভেবে কূল পাবেন না এই অবস্থায় কী করবেন— হাসপাতালে ছুটবেন নাকি বাড়িতেই চিকিৎসা নেবেন? এ সময় জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডা. খায়রুল বাশার। তিনি দৈনিক বর্তমান সময়কে বলেন, জ্বর হলেই হাসপাতালে ছোটার দরকার নেই। কারণ এই রোগ খুবই সংক্রামক। এতে একজন থেকে অন্যজন, এমনকি হাসপাতালের অন্য রোগীরাও আক্রান্ত হতে পারেন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, একজন থেকে কতজন আক্রান্ত হবেন তার পরিসংখ্যান করা মুশকিল!
কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক না থাকায় এর প্রতিরোধে সচেতন হওয়াই এখন পর্যন্ত কার্যকর উপায়। এছাড়া
কিছু নিয়ম মেনে ঘরে বসেই স্বাভাবিক জ্বরের চিকিৎসা নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন ডা. বাশার।
- প্রথমেই হাসপাতালে না গিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করুন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে, আপনিও নিরাপদ থাকবেন।
- একজন সুস্থ মানুষের দেহে সাধারণত ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার পর থেকে জ্বর হিসেবে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৯৮.৬ থেকে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে প্রাথমিক অবস্থায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এবং রোগীর অবস্থার বর্ণনার উপর চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করবেন।
- এ সময় নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন এবং আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। সর্দি বা নাক দিয়ে পানি পড়লে ফেক্সোফেনাডিন বা সেটিরিজিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
- পর্যাপ্ত পানি এবং ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন। কারণ সাধারণ সময় অপেক্ষা জ্বরের কারণে শরীরের পানির চাহিদা শতকরা ৫-৭ ভাগ বেড়ে যায়।
- মানসিকভাবেনিজেকেপ্রস্তুতকরুন।মনেরাখতেহবেআমাদেরমানসিকশক্তিরোগপ্রতিরোধকরতেবড়ভূমিকা রাখে।
- চিকিৎসককে সঠিক তথ্য দিয়ে আপনার রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করুন। যেহেতু তিনি সরাসরি আপনাকে দেখছেন না, তাই এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ইতিমধ্যেইআক্রান্তহয়েছেন— এমনব্যক্তিদেরসংস্পর্শএড়িয়েচলতেহবে, হাঁচি-কাশিরশিষ্টাচারমেনেচলতেহবে।
- অসুস্থ পশুপাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে এবং মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে।
- যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া ও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।
এরপরও অবস্থার উন্নতি না হলে বা কারও মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নাক-মুখ ঢেকে (মাস্ক ব্যবহার) বাড়িতে অপেক্ষা করতে হবে। অবস্থা খারাপ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।