ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ: সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস মহাসংকটকালে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এ দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন থেকেই বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। প্রত্যেক দেশ ও জাতিরই কিছু গৌরবোজ্জল দিন থাকে। সেই দিনগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর এই দিবসগুলোর জন্য কোন না কোন মাস দেশ ও জাতির জীবনে অতি উজ্জ্বল গর্বের মাস হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। ডিসেম্বর মাস আমাদের জীবনের তেমনই একটি গর্বের মাস। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস ও ২৫ ডিসেম্বর খ্রিষ্টধর্মালম্বীদের বড় দিন। বজ্র আটুনি ফস্কো গিরো। আইন যত কঠিন তা ভাঙ্গা ততই সহজ। ঘটা করে আইন করা হয় যেন তা ভাঙ্গার আনন্দ লাভের জন্য। আইন ভাঙ্গার এই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশেরে মতো বাংলাদেশেও আজ মহা সমারোহে পালিত হয় বিশ্ব মানবাধিকার দিবস।
নারী-পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মানবাধিকারের প্রভাব অনস্বীকার্য। তাই খৃষ্টপূর্ব প্রায় ২২৮৮ থেকে ২১৩০ সালে পৃথিবীর প্রাচীনতম আইন সংকলন ব্যবলিনের রাজা হাম্মারাবীর নিয়ামাবলীতে মানবাধিকার সংরক্ষণের কথা পাওয়া যায়। খৃষ্টীয় ৭ম শতাব্দীতে মদিনার বহু ধর্মভিত্তিক সমাজে হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক প্রনীত ‘মদিনার সনদ-এ মদিনার সকল নাগরিকই সমান অধিকার ভোগ করবে এ কথা বলা হয়েছিল। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে ঘোষণার ৩০টি ধারায় প্রধান প্রধান অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সংযোজন করা হয়েছে। কোনোপ্রকার বৈষম্য ছাড়াই পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের মানুষ ঐ অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। ঘোষণায় যেসব অধিকার যুক্ত হয়েছে: জীবন, স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকার, দাসত্ব থেকে মুক্তি, স্বৈরাচারী আটক ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষ আদালত কর্তৃক সুষ্ঠু বিচারের অধিকার, দোষী সাব্যস্ত না-হওয়া পর্যন্ত নিরপরাধ হিসেবে গণ্য করার অধিকার, আবাসস্থলের অলঙ্ঘনীয়তা ও পত্রালাপের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার, চলাচল ও বসবাসের অধিকার, বিবাহ ও পরিবার গঠনের স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত হবার ও সংগঠন গড়ার স্বাধীনতা, ভোটদান এবং সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মের ও উপযুক্ত জীবনযাত্রার মানের নিশ্চয়তা বিধান, শিক্ষা ও সমাজের সাংস্কৃতিক জীবনে অংশগ্রহণের অধিকার।মানবাধিকার সম্বন্ধে সার্বজনীন ঘোষণায় সংগঠন, প্রত্যক্ষভাবে বা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারে অংশগ্রহণ, সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে সমানাধিকার, বিশ্রাম ও অবসর যাপনের অধিকার, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বাস্থ্যরক্ষার অধিকার; রোগ, অক্ষমতা এবং বৃদ্ধবয়স ও বৈষম্যে নিরাপত্তা এবং অভাব থেকে মুক্তির অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। তাছাড়া সাধারণভাবে অভাব থেকে মুক্তি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সাম্য এবং আইনের দ্বারা সমানভাবে সংরক্ষিত হবার আধিকারও ঘোষিত হয়েছে। সাধারণ পরিষদ ঐ ঘোষণাকে সকল মানুষ ও জাতির পক্ষে সাফল্যের সাধারণ মান হিসাবে উল্লেখ করেছে। ঐ সকল জাতির অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি এবং তাদের প্রয়োজনের জন্য সাধারণ মানুষ ও সকল জাতির কাছে আবেদন করেছে।দিবসটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত দক্ষিণ আফ্রিকায় শার্পেভিল গণহত্যাকে স্মরণ করে দিবসটি উদযাপিত হয় ২১ মার্চ এবং ১৯৫০ সালের ৪ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩১৭তম পূর্ণ অধিবেশনে ৪২৩(৫) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সদস্যভূক্ত দেশসহ আগ্রহী
সংস্থাগুলোকে দিনটি তাদের মতো করে উদযাপনের আহ্বান জানানো হয়। মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সভা-সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধরণের তথ্যচিত্র কিংবা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী প্রধানতঃ এ দিনের সাধারণ ঘটনা। বিশ্বজুড়ে যখন মানবাধিকার দিবসের নানান আহবান তখন মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ পুরো বিশ্বেই। প্রতিদিনই নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে বার্মার শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম।বাঙালির সবচেয়ে আনন্দের দিন মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দিন। এদিন বিশ্বের মানচিত্রে সৃষ্টি হয় নতুন একটি সার্বভৌম দেশ, বাংলাদেশ। যা বাঙালি জাতিকে এনে দেয় আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। যারা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন সেসব শহীদকে বিন্ম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। বিজয়ের পর ৪৯ টি বছর পেরিয়ে গেলেও রক্তক্ষরণ আজো থামেনি। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিজয়ের এ দিনে সবার অঙ্গীকার- ‘সুন্দর ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার।’ যেসব বষম্য থেকে স্বাধীনতার জন্ম সেই বৈষম্যগুলো থেকে এ জাতি বেরিয়ে আসতে হোক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এ উপলক্ষে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারাদেশে এসব কর্মসূচি পালিত হবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালী, মানববন্ধন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা ও স্মরণিকা প্রকাশ। এ ছাড়াও রয়েছে রক্তদান কর্মসূচি রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
এদিকে হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংস্থার ২৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মানববন্ধন ও র্যালি সকাল ৮টায়। বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের আলোচনা সভা সকাল ১০ টা শিশু কল্যান পরিষদ এক সেমিনার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া আলোচনা সভা,শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সংগঠন,পরিশেষে মানবাধিক দিবসের আলোচনা সভায় বিশেষ করে উঠে আসবে করোনাকালে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি, আইন-শৃংখলা বাহিনী/প্রশাসনের সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাসমূহ।
লেখক: স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
কো-চেয়ারম্যান, হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
মোবাইল: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯