লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
অন্যান্য টিকার মতো করোনার টিকা নিলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অধিকাংশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই মৃদু প্রকৃতির এবং এসবের স্থায়িত্ব এক সপ্তাহের বেশি নয়। উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো- ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা-ফোলা বা লাল হওয়া, জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, শীতশীত অনুভূতি, ক্লান্তি ও বমিভাব।
যারা করোনার টিকা নেওয়ার পর হাতে ব্যথা অনুভব করেন তাদের একটা প্রবণতা হলো- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই পেইনকিলার (ব্যথানাশক ওষুধ) সেবন করা। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের পেইনকিলার রয়েছে। একেক পেইনকিলার একেক স্বাস্থ্য সমস্যায় কার্যকর ও নিরাপদ। তাই স্বাস্থ্য সমস্যার প্রকৃতি অনুসারে সঠিক পেইনকিলারের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রকারের ব্যথায় প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করতে পারবেন না।
করোনার টিকা জনিত ব্যথা কমাতে কোন পেইনকিলার ব্যবহার করবেন?
করোনার টিকার সবচেয়ে প্রচলিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যথা সংক্রান্ত। অর্থাৎ টিকাগ্রহীতাদের ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা, মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা হয়ে থাকে। জ্বরও প্রত্যাশিত। সাধারণত এরকম অসুস্থতা দূর করতে অনেকেই প্যারাসিটামল ব্যবহার করে থাকেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এর পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা এই পেইনকিলারকে তুলনামূলক নিরাপদ ও কার্যকর বলেছেন। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেসের (এনএইচএস) ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনার টিকা নেওয়ার পর প্রয়োজনে প্যারাসিটামলের মতো পেইনকিলার ব্যবহার করা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রও (সিডিসি) প্যারাসিটামলকে অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধের তুলনায় নিরাপদ বলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও প্যারাসিটামলের পক্ষে সায় আছে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উপশমে প্যারাসিটামল ব্যবহার করলে করোনার টিকার কার্যকারিতা কমে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই ইনজেকশনের স্থানে ব্যথাকে বা অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে সহনীয় মনে হলে প্যারাসিটামল বা অন্যান্য পেইনকিলার ব্যবহার না করাই ভালো। এর পরিবর্তে বরফের সেঁক দিতে পারেন। অনেক চিকিৎসক এটাকে কার্যকরী বলেছেন। এছাড়া শ্রমসাধ্য কাজ থেকে বিরত থাকুন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
করোনার টিকা জনিত ব্যথা কমাতে আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করবেন না কেন?
ব্যথা উপশমে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বহুল ব্যবহৃত আরেকটি পেইনকিলার হলো আইবুপ্রোফেন। টিকাগ্রহীতাদের অনেকেই ব্যথা সংক্রান্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে স্বস্তি পেতে আইবুপ্রোফেন সেবন করে থাকেন। আইবুপ্রোফেন সেবনে হয়তো স্বস্তি পাওয়া যাবে, কিন্তু এর ঝুঁকিও রয়েছে।
শরীরে টিকা প্রবেশের পর এটি মনে করে যে ভাইরাসের মতো শত্রু ঢুকে পড়েছে। তাই শরীরের ইমিউন সিস্টেম (রোগপ্রতিরোধ তন্ত্র) শত্রু দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এরই একটা অংশ হলো প্রদাহ। প্রদাহিত শরীরে কিছু উপসর্গ প্রকাশ পেয়ে থাকে, যেমন- ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা ও ফোলা, পেশি ব্যথা ও দুর্বলতা। কিছু ব্যথানাশক ওষুধ প্রদাহে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তেমনই একটা পেইনকিলার হলো আইবুপ্রোফেন। টিকা চায় যে প্রদাহের মতো ইমিউন রেসপন্স তৈরি করতে, তাই এসময় আইবুপ্রোফেন সেবন করলে এই কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে টিকার কার্যকারিতা কমে যাবে। অর্থাৎ যে ইমিউনিটি অর্জিত হবে তা কোভিড-১৯ থেকে বেশিদিন সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হবে না।
জার্নাল অব ভাইরোলজিতে প্রকাশিত ইঁদুরের ওপর পরিচালিত গবেষণায় জানা গেছে, প্রদাহনাশক পেইনকিলার অ্যান্টিবডির উৎপাদন কমাতে পারে। মূলত অ্যান্টিবডিই শরীরে ঢুকে পড়া ক্ষতিকারক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাই এর উৎপাদন কম হলে সুরক্ষাও কম হবে এটা সহজেই অনুমান করা যায়। একারণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে আইবুপ্রোফেনের মতো প্রদাহনাশক ব্যবহারে অনুৎসাহিত করেছেন।
করোনার টিকা নেওয়ার আগে পেইনকিলার ব্যবহার করা যাবে?
কেউ কেউ করোনার টিকা নেওয়ার আগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিরোধের কথা ভেবে থাকেন। তারা মনে করেন যে, টিকাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে প্যারাসিটামলের মতো পেইনকিলার সেবন করলে ব্যথা সংক্রান্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করবে না বা জ্বর আসবে না। কিন্তু এর কোনো ভিত্তি নেই। ব্যথা বা জ্বর আসার আগেই সংশ্লিষ্ট ওষুধ ব্যবহারের নিয়ম নেই। চিকিৎসকেরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে করোনার টিকা নেওয়ার আগে পেইনকিলার ব্যবহার না করার পক্ষে। তবে কেউ অন্য সমস্যার কারণে পেইনকিলারের ওপর থাকলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে- চিকিৎসকের সম্মতি থাকলে ব্যবহার করা যাবে।
করোনার টিকা নেওয়ার আগে প্যারাসিটামল বা অন্যকোনো পেইনকিলার সেবন করলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই বললেই চলে।কিন্তু তারপরও এটার ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এসময়ও পেইনকিলার ব্যবহার করলে টিকার কার্যকারিতা হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে, তবে এখনো গবেষণায় সুনিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সতর্কতাস্বরূপ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, করোনার টিকা গ্রহণের আগে পেইনকিলার সেবনের প্রয়োজন নেই।
বিএসডি/এএ