নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবারও শ্রমবাজারের দ্বার উন্মুক্ত করছে মালয়েশিয়া। ইতিমধ্যে বিদেশি কর্মী নিয়োগ ও তাদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। এখন বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ স্বাক্ষর হলেই শুরু হবে বাংলাদেশি নতুন কর্মীদের মালয়েশিয়া যাত্রা। এমওইউ বিষয়ে গত সপ্তাহে দুই দফায় আলোচনাও করেছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী মাসেই দুই দেশের মধ্যে এমওইউ হবে। এর দিনক্ষণ ঘোষণা হবে যে কোনো সময়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হবে। এমওইউর খসড়া চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভার অনুমোদন ও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিদেশি কর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কারণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের আলোচনা নতুন করে গতি পেয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এমওইউ স্বাক্ষর নিয়ে ভার্চুয়ালি আলোচনা করেছেন। তাদের আলোচনার পর এমওইউতে কয়েকটি বিষয়ে সংশোধন আনা হয়েছে। পরে গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা সংশোধিত এমওইউর খসড়া বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। এখন খসড়ার বিষয়ে নিজেদের বাংলাদেশ সম্মতি বা মতামত পাঠাবে মালয়েশিয়ায়। এর পরই এমওইউ কবে স্বাক্ষর হবে তার ঘোষণা আসার কথা রয়েছে। আগের এমওইতে কী ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা জানান, আগে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে দুই দেশের সরকারের মধ্যে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। এটা এবার থাকছে না। এখন বাংলাদেশে যেমন করে বেসরকারি এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠানোর সুযোগ পায়, সেভাবে মালয়েশিয়াতেও বেসরকারি এজেন্সি কর্মী নেওয়ার কাজ করবে। আর মালয়েশিয়ায় যাওয়া কর্মীদের জন্য রাখা হচ্ছে ইন্স্যুরেন্সের সুবিধা। এতে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের সংকটে পড়া কর্মীরা এক ধরনের নিরাপত্তা পাবেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার বাগান ও শিল্পপণ্য মন্ত্রী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রথম দফায় ৩২ হাজার শ্রমিক সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে এই সংখ্যা এখন দিন দিন বাড়ছে। কারণ মালয়েশিয়ার মন্ত্রণালয়ে নতুন নতুন কর্মী নেওয়ার আবেদন জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা ৮০ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মী পাঠানো শুরু হলে নতুন আবেদনগুলোর অনুমোদন দেওয়া হবে। এ ধরনের ইঙ্গিত এসেছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতেও।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, যেসব অনুমোদিত খাতে সরকার কর্তৃক এসওপি মেনে চলছে সেসব খাতে বিদেশি শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মালয়েশিয়া প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। কভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি বৈঠকে বিদেশি কর্মী মালয়েশিয়া প্রবেশের যে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটা প্রত্যাহার করে এসওপি অনুমোদন করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একই সময়ে স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রীর মধ্যে যৌথ বৈঠকের ফলে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্যান্য খাতে বিদেশি কর্মী কোটা এবং তারিখ নির্ধারণ করা হবে। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম-এসওপিগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রি-ফ্লাইট, আগমন, কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড এবং কোয়ারেন্টাইন-পরবর্তী সময়। প্রি-ফ্লাইট প্রয়োজনীয়তার অধীনে বিদেশি কর্মীদের অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ থাকতে হবে। ফ্লাইটের ৩ ঘণ্টা আগে আরটি-পিসিআর টেস্ট করাতে হবে। ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে। অভিবাসন বিভাগ ও সরকারের অন্যান্য বিধিনিষেধ নির্ধারিত শর্ত এবং নীতিমালা মেনে চলতে হবে। বিদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রবেশের সময় কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেএলআইএ) এবং (কেএলআই-২) মাধ্যমে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশের পর মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত বাধ্যতামূলক সাত দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে তাদের নিয়োগকর্তা বা মালিকের কাছে পাঠানো হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো শেষ হলে নিয়োগকর্তা বা মালিকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
বিএসডি/আইপি