বর্তমান সময় ডেস্ক:
অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণায় জড়িয়ে পরেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজাদ হাজারী আঙ্গুর। নিজের রাজনৈতিক পদ-পরিচয় ব্যবহার করে দিনের পর দিন অপকর্ম করে গেলেও পার পেয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে তার অনিয়ম, দুর্নীতির একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা কেউ রাখছেন না। ভুক্তভোগীরা তার প্রভাব প্রতিপত্তির কাছে অসহায়।
অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগও তার ব্যাপারে নিশ্চুপ। এই সুযোগে ক্রমাগত বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন চেয়ারম্যান আজাদ। জানা যায়, আজাদ হাজারী আঙ্গুর বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইউপি সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরুর পর বিগত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর থেকেই এলাকায় নিজস্ব বলয় গড়ে তোলেন। এই বলয়ের মাধ্যমে জেলার বিসিক ও বাখরাবাদ গ্যাসফিল্ড (পূর্বের নাম তিতাস) কেন্দ্রিক নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, জমি দখল ও টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে বনে যান বিত্তশালী। তার এমন অপকর্মে বিব্রত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা জানান- ‘‘কিছু বলার নেই। তার ক্ষমতার কাছে আমরা অসহায়। মাঠ পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে দেখতে পারেন, চেয়ারম্যান ও তার গংদের সমস্ত কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। কয়েকজন ব্যক্তির খারাপ কর্মকাণ্ডের দায় তো দল নিতে পারে না।’’
স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে দলের ভাবমূর্তি আর মানুষের কল্যাণের দিকটি বড় হলেও আঙ্গুরগংদের কাছে এসবের গুরুত্ব নেই। অভিযোগ আছে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কমিশন বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা অনিয়মের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চেয়ারম্যান আজাদ হাজারী। অন্যদিকে এই গং অবৈধ গ্যাস সংযোগের নামে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। স্ট্যাম্পে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সহি-স্বাক্ষর নিয়ে রীতিমতো চুক্তির মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে। মজার বিষয় হলো বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাস সংযোগ দেয়ার কর্তৃপক্ষ হলেও দাতার তালিকায় রয়েছেন আঙ্গুর হাজারিসহ তার গংদের নাম। এদের মধ্যে সক্রিয়ভাবে ঘাটুরার মহসিন খন্দকার, কাজি পাবেল, মেড্ডার আবুল বাশার, আলমগীর, জাকির, ভাটপাড়ার জামাল মেম্বার, শহরের মধ্যপাড়ার শামীম, সেলিম ও রামরাইল এলাকার সেলিম মাস্টারসহ ১৫ থেকে ২০ জন জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, অবৈধ গ্যাস-সংযোগের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। রাজনৈতিক প্রভাব ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট প্রতিদিনই নতুন নতুন বাড়িতে দিচ্ছে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ। বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায় এ নিয়ে অসংখ্য সংবাদ প্রচার, মানববন্ধন করেও কোনো প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
এছাড়া সুহিলপুর ইউনিয়নের এসব ক্ষমতাধর ব্যক্তির প্রভাবে কেউ মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারেন না। কেউ কথা বললে জুলুম- নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছেন বলে এলাকার ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, এলাকাবাসীর অভিযোগ- আঙ্গুর চেয়ারম্যানের পোষ্য বাহিনী সিন্ডিকেট করে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। ফলে একদিকে যেমন হচ্ছে গ্যাসের অপচয় অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। সরজমিনে দেখা গেছে, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড দফায় দফায় চেষ্টা করেও থামাতে পারছে না এই সিন্ডিকেটকে। সিন্ডিকেটের হাতে একাধিক কর্মকর্তা নাজেহালও হয়েছেন, কোনো কোনো কর্মকর্তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে টাকার বিনিময়ে পাওয়া অবৈধ শতশত গ্যাস সংযোগ বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বিচ্ছিন্ন করা গ্রাহক পড়েছেন বিপাকে। টাকার টাকাও গেল সেই সঙ্গে সংযোগও। তারা এখন টাকা অথবা গ্যাস সংযোগ ফিরে পাওয়ার জন্য আঙ্গুর গংদের কাছে ধন্না দিচ্ছে। কিন্তু ফল মিলছে না। এ বিষয়ে স্থানীয় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করলেও নানা হুমকি ধামকি অব্যাহত রাখার অভিযোগ রয়েছে।
সুহিলপুর গ্রামের কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়- টাকা ফেরতের আশায় তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ উপজেলা সদর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতার পেছনে অনেকদিন ধরে ঘুরাঘুরি করছেন। তিনি আশ্বাস দিলেও বলার মতো কোন অগ্রগতি নেই।
সুহিলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী মো. হোসেন মুন্সী জানান, গ্যাস সংযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় ঝামেলা চলছে এমন খবর আমি পেয়েছি। কিন্তু এ নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুহিলপুর, দারমা, নন্দনপুর, কোনাহাটি-মাইঝহাটি জড়জড়িয়াপাড়া, মালিহাতা, হাড়িয়া, গৌতমপাড়া, তেলীহাটি, হিন্দুপাড়া, কেন্দুবাড়ী, রাজঘর, নাটাই, ভাটপাড়া, আমতলী, রামরাইল, বুধলগ্রাম, শালগাঁও, কালীসীমা গ্রামে হাজার হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন চিহ্নিত করেছে। জেলার কুট্টাপাড়া, মালিহাতা, কলামুড়ি, আইড়া, জরজরিয়া, ছাতিয়াইন, বুধল, আমতলি, ভাটপাড়া, রাজঘর, থলিয়াড়া, রামরাইল, ভোলাচং, উলচাপাড়া, বিজেশ্বর, নাসিরপুর, বিয়ালিশ্বরসহ আরও অনেক গ্রামে সংযোগ দিচ্ছে এই গ্যাস
সিন্ডিকেট। এছাড়াও শহরের নতুন ভবনগুলোতেও দেওয়া হচ্ছে সংযোগ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লাইন বসানো হয়েছে সুহিলপুরে। সেখানে অবৈধভাবে সম্প্রসারণ করা গ্যাসলাইন থেকে কয়েক হাজার সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, সুহিলপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এমন ঘটনার খবর পেয়েছি। দলীয় কোনো নেতা-কর্মী অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে জড়িত থাকলে কিংবা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবো। তবে, আজাদ হাজারী আঙ্গুরের বিষয়ে কিছু তথ্য নিয়ে তারপর আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারবো না।
সুহিলপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহরুল বলেন, সুহিলপুর ইউনিয়নে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শুনেছি।
বিভিন্ন পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে লেখালেখি হয়েছে। আমার কাছে পেপার কাটিংও আছে। তবে আঙ্গুর চেয়ারম্যান এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কি-না আমি নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। আর আমার কাছে কোনো ভুক্তভোগী এমন কোনো অভিযোগও করেননি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেবো।