আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
এবারের গ্রীষ্মে খুব কঠিন সময় যাচ্ছে জেক ফ্রিস্টোনের। পশ্চিম ইংল্যান্ডের ওরচেস্টারশায়ার-গ্লুচেস্টারশায়ার সীমান্তে ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টরজুড়ে একটি খামার রয়েছে তার। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে জেকের তেলবীজ জাতীয় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন চাষের জন্য মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা নেই। তার ৮৫০টি ভেড়া ও ১ হাজার ৪০০টি ভেড়ার বাচ্চার খাবারের ঘাস ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। জমির বিশাল অংশে শালগম লাগাতে না পারায় আগামী শীতের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে পশুখাদ্যও মজুত করতে পারেননি তিনি।
গত ১২ আগস্ট ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ইংল্যান্ডের বিশাল এলাকায় খরা দেখা দিয়েছে ঘোষণা দেন। গত মাস ছিল দেশটিতে ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে শুষ্কতম জুলাই। এসময় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে। আগের গ্রীষ্মগুলোর তুলনায় দেশটির নদীগুলোতে পানির প্রবাহ কমে গেছে। জলাধারগুলোও দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। গত জুনে দেশটির কিছু জায়গায় পানির গড় সঞ্চয় স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ কম ছিল। বেশিরভাগ অঞ্চলেই মাটির আর্দ্রতা কমপক্ষে ২০১৩ সাল থেকে সর্বনিম্ন।
এতে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের বহু কৃষক। কারও কারও মটর, মটরশুটি, লেটুস, পালংশাকের পুরো ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। গবাদিপশুরা ক্ষুধার্ত থাকছে। ইংল্যান্ডের কিছু অংশে খরা ঘোষণার পর পানি ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে, যা আরও বড় বিপর্যয় যেকে আনতে পারে। তবে ভাগ্যদেবী যেদি এবার মুখ তুলে চায়ও, তবু জলবায়ু পরির্বতনের কারণে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের সমস্যা দেশটিতে নিয়মিত হতে চলেছে।
শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাব কমাতে এরই মধ্যে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করছেন কৃষকরা। যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ কৃষক পাইপলাইনের পানি ব্যবহার করেন। বাকিরা নদী ও কূয়া থেকে পানি নেন। নদী থেকে পানি সংগ্রহের জন্য দেশটিতে সরকারি পরিবেশ সংস্থার কাছ থেকে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। খরার মুখে সেই অনুমতি হয়তো বাতিল হতে পারে।
জলাধারে পানি সঞ্চয় করে এমন সংকটের ঝুঁকি কমানো যায়। তবে বেসরকারি জলাধার ব্যবহার মোটেও সস্তা নয়। এতে ১০ লাখ ইউরোর বেশি (১২ লাখ মার্কিন ডলার প্রায়) ব্যয় হতে পারে। অবশ্য সরকারি সহায়তার মাধ্যমে সেই চাপ কিছুটা কমানো সম্ভব।
জেক ফ্রিস্টোনের খামারের জলাধারে পানি বিপজ্জনকভাবে কমে যাচ্ছে। এ ধরনের আরও প্রকল্পকে উৎসাহিত করার জন্য কর মওকুফের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে পানি সংক্রান্ত অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগের দাবি করেছে ন্যাশনাল ফার্মার্স ইউনিয়ন (এনএফইউ)।
যুক্তরাজ্যে গত ৩০ বছরে বড় কোনো সরকারি জলাধার তৈরি হয়নি। সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ পানি বেরিয়ে যায় পাইপলাইনের ছিদ্র দিয়ে। এনএফইউ’র দাবি, ব্রিটিশ সরকার যেন নতুন পাইপলাইন তৈরি করে দেশটির সবচেয়ে আর্দ্র অঞ্চল থেকে সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলে পানি পুনর্বণ্টন করে এবং অভাবের সময়ে কৃষকদের পানি সরবরাহকে অগ্রাধিকার দেয়৷
ভুক্তভোগী এক কৃষকের কথায়, আমাকে যদি এইচএস২ (উচ্চগতির রেলপথ) এবং নতুন পানি অবকাঠামোর মধ্যে একটি বেছে নিতে হয়, তাহলে জানি আমি কোনটি চাই।
বিএসডি/ফয়সাল