বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিতে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করা হয়েছে। আজ-কালের মধ্যেই নতুন পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন খালেদা জিয়া। এরপর দু-এক দিনের মধ্যে ভিসাপ্রক্রিয়া শুরু হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়েছে। সেখানে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক এবং দুবাই দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট দেশের ‘অনুমতি’ দেওয়া হয় কি-না সেদিকে তাকিয়ে আছে দল ও পরিবার।
তবে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে পরিবারের আবেদনকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে সরকার। আগামীকালের (৯ মে) মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে ‘আনুষ্ঠানিক’ অনুমতি পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টের জন্য সশরীরে উপস্থিত থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আবেদনপত্রে স্বাক্ষর দেওয়ার নিয়ম থাকলেও খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেই শর্ত শিথিল করে পাসপোর্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কোন দেশে পাঠানো হবে তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি বিএনপির তরফে। তবে যুক্তরাজ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। খালেদা জিয়া ভিসার আবেদন করলে যুক্তরাজ্য সরকার সেটি বিবেচনা করে দেখবে বলে এক বার্তায় জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মুখপাত্র মেহের নিগার জেরিন।
বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য বিএনপি প্রস্তুত : যুক্তরাজ্য বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনেই আনা হবে। বিষয়টি সরাসরি তারেক রহমান ও তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান তদারকি করছেন। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক বলেন, ম্যাডামকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আনা হলে তাঁর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সদ্য করোনামুক্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তবে তিনি পোস্ট কভিড জটিলতায় ভুগছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের করোনার কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। তাঁর ফুসফুস থেকে তরল জাতীয় পদার্থ (ফ্লুইড) দুই দফা অপসারণ করা হয়েছে। তাঁর ডায়াবেটিস এখন প্রায় নিয়ন্ত্রণে। তাঁর এখন দিনে ১-২ লিটার অক্সিজেন লাগছে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বাড়ছে। এখন তিনি স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন।
চিকিৎসকরা যা বললেন : সরকারের অনুমতির পরই খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। গতকাল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। ডা. জাহিদ বলেন, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়েছে। এখন এটি সরকারের বিষয়। তারা কবে নাগাদ তাঁকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে। এখনো তাঁকে (খালেদা জিয়া) অনুমতি দেওয়া হয়নি। যখন অনুমতি আসবে তখন হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আজকেও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। যে চিকিৎসা গতদিন ছিল সেই চিকিৎসাই বোর্ড অব্যাহত রেখেছে। আলহামদুলিল্লাহ গতকালের মতো আজও ম্যাডামের অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তাঁর অবস্থা অপরিবর্তিত। সরকারের অনুমতি পেলে বিমানে ভ্রমণের মতো শারীরিক অবস্থা বিএনপি চেয়ারপারসনের আছে কি না প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, সরকারের অনুমতির পরই এ বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। দেশবাসীর কাছে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা ও দোয়া চেয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন দেশের বিধিনিষেধ : খালেদা জিয়ার পরিবার তাঁকে প্রথম লন্ডনে নিতে আগ্রহী। কিন্তু বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য সে দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে সেখানে আলোচনা চালাচ্ছেন। লন্ডনের বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার বিষয়ও পরিবারের চিন্তায় রয়েছে। তবে এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ থেকে যাত্রী যাওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এখন সৌদি আরব খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সুবিধাজনক দেশ হতে পারে। পাশাপাশি দুবাই বা ব্যাংককের চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে।
দীর্ঘ বিমান যাত্রা নিয়ে সংশয় : খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৬ বছর এবং তিনি কিছু দিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ফলে এখনকার শারীরিক অবস্থায় তিনি বিমানে দীর্ঘ যাত্রা করতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান পরিবারের এক সদস্য। তাঁর একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জটিলতাগুলোর উন্নতি লক্ষণীয়ভাবে ঘটছে না। প্রায় সব ক্ষেত্রে অবস্থা আগের মতোই থাকছে। সে জন্য তাঁর বিমানে দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে এখনো সংশয় আছে। লন্ডনে যাওয়ার মতো দূরের যাত্রার সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে তারা আবারও সবকিছু পরীক্ষা করে দেখবেন বলে জানান।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনা আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হলে ফলাফল আবারও পজিটিভ আসে। এরপর কিছু পরীক্ষার জন্য তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রথম দফায় পরীক্ষা করে বাসায় ফেরার পর দ্বিতীয় দফায় ২৭ এপ্রিল তাঁকে ফের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সোমবার ভোরের দিকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।