শ্রোতাপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর। গানের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। নতুন গান আর ব্যক্তিজীবনের নানা বিষয় ভক্ত-শ্রোতাদের সামনে প্রায়ই তুলে ধরেন তিনি। এবার এই শিল্পী শোনালেন তার শখ আর ফেলে আসা অতীতের কথা।
এক ফেসবুক পোস্টে আঁখি আলমগীর লিখেছেন, ‘বাগানের আমার খুব শখ। সময় সুযোগের জন্য কেন যেন বাগানটাই করা হলো না। অথচ আমার শিশুবেলা কেটেছে নানান রকমের ফল-ফুল, সবজীর বাগানে। তেজগাঁও স্টেশন রোড ছিল দাদার বাড়ি। বিশাল জমির ঠিক মাঝখানে এল শেপের দোতলা বাড়ি। হরেক রকমের ফল গাছের জন্য দিনের বেলায় যা বাগান বাড়ি মনে হতো, রাতেই হয়ে যেত তা ভূতের বাড়ি।
ছোটবেলায় কতবার যে ভূতের ভয় পেতাম আর দৌড়ে পালাতাম, এখন বুঝি সব ছিল বাতাসে দোল খাওয়া গাছের ছায়া। ছায়া ভয় পেয়েছি ঠিক কিন্তু কখন যেন ছায়ার ছন্দ আমি ধরে ফেলেছি বুঝিনি, সঙ্গে সুর।
আমার গান, আমার নাচ ছোটবেলা থেকেই অপ্রতিরোধ্য। বাড়িতে আসা যে কোনো মেহমানের জন্য চা নাস্তার সঙ্গে আমার গানের ফ্রি পরিবেশনা। সবাই বলত এই মেয়ে নিশ্চয় বড় অভিনেত্রী হবে। খুব রাগ হতো; শুনালাম গান, বলে অভিনেত্রী হবে। তার মানে গানটা ভালো হলো না? মন খারাপের সঙ্গে জেদ চেপে যেত। ভোর ৫টায় উঠে প্র্যাকটিস করতাম, ৭টায় স্কুলে যেতাম। এরপরেও মাত্র একটি ছবিতে (‘ভাত দে’) অভিনয় করেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে যাই আর সবার আমার গানটাকে পাশ কাটানোর ব্যক্তিগত তাগিদের আগুনে যেন নতুন করে ঘি ফেলা হয়। তবুও থামিনি, অতঃপর আমি আজকের কণ্ঠশিল্পী। এটাই আমার প্রফেশন, পরিচয়। এবং অবশেষে আমি গানেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করি। এখনো চলছি চলবো, ইচ্ছা এমনটাই আছে।
অনেক অনেক গল্প, অভিজ্ঞতা, সাহসিকতা আর ভ্রমণে ভরা আমার জীবন অনেকটাই যাযাবরের মতো, যার ঘর পালানোর পরেই আবার ঘরে ফিরে আসতে ইচ্ছা হয়। আমার ঘর আমাকে টানে। বাগান নেই কিন্তু ফুলের মালিক আমি এরপরও হয়েছি। দুটো ফুটফুটে অসম্ভব ভালো মেয়ের মা আমি। ওরা এতটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে, সুরভিত করেছে যে ওই বাগান না হওয়ার কষ্ট কিছুটা হলেও কমেছে।
এরপরেও বাগান প্রেমী আমি, সব কিছুতেই ফুল খুঁজি। আমার ঘরের প্রতিটি কোনায়, বিছানার চাদরে, খোঁপায়, শাড়িতে এমনকি মোবাইলের কাভারে ফুল আছেই কোনো না কোনো ভাবে। হয়তো কখনো এক টুকরো জমি হবে তখন গাছ হবে, ফুল হবে, ওরাই আমাকে খুঁজে নেবে।
যারা বাগান করেন তাদের বলছি, সবার বাগান আরও সুন্দর হোক, সুরভিত হোক, জীবন হোক পরিপূর্ণ। মাঝে মাঝে আমাকে ছবি তুলতে বেড়াতে আসতে দিলেই আমি খুশি।