নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে স্কুল-কলেজ। প্রায় এক মাস ক্লাস শেষে প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৭৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২১ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত। তাদের খোঁজ মিলছে না।
অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে গাজীপুরে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতেও ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে।
গাজীপুরের বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক ছাত্র গ্রামে চলে গেছে। কেউ কেউ নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে গেছে। দীর্ঘ একটি সময় ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে যোগাযোগ না থাকায় শিক্ষকরা ছাত্রদের ঝরে পড়ার কারণ ঠিকভাবে বলতেও পারছেন না। তবে শিক্ষকরা জানালেন, আমরা প্রতিটি অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার শিক্ষার্থী ছিলো ১৬ হাজার ৪৮৪ জন। করোনার পর বর্তমানে স্কুলে আসছে ১২ হাজার ১৩৫ জন। কালীগঞ্জ উপজেলার ৭ হাজার ৪৯৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৬ হাজার ১৭০ জন। কাপাসিয়ার ৯ হাজার ৫১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৮ হাজার ৬০৩ জন। শ্রীপুর উপজেলায় ১৫ হাজার ১৩৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ১১ হাজার ৯৭২ জন। কালিয়াকৈরের ৯ হাজার ৯০ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ৭ হাজার ৬৩৭ জন। এছাড়া টঙ্গী অঞ্চলে ২ হাজার ৪২৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮০ জন। দেখা গেছে, গাজীপুরে করোনার আগে মোট শিক্ষার্থী ছিলো ৬০ হাজার ১৩৭ জন। দেড় বছর পর গত ১০ অক্টোবর উপস্থিত হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৭ জন। ১২ হাজার ৬০ জন শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত রয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন জানান, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী গাজীপুরে প্রাথমিকে ২১% শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই একদিন হয়তো আসেনি কোনো কারণে আবার পরদিন হয়তো উপস্থিত ছিলো। নানা কাররণ অল্প কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকরা তাদের অভিভাবকের যোগাযোগ করে যাচ্ছে।
গাজীপুর জেলা মাধ্যমিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে মাধ্যমিকেও উপস্থিতির হার কম রয়েছে। সর্বশেষ গত ১০ অক্টোবরের হিসাব মতে গাজীপুর সদর এলাকায় শতকরা ৮০ট ভাগ, শ্রীপুর উপজেলায় ৬৫ ভাগ, কাপাসিয়া উপজেলার ৬০ ভাগ, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৮০ ও কালীগঞ্জে ৭৯ ভাগ শিক্ষার্থী গড়ে উপস্থিত হচ্ছে। তাদের গড় হিসাবে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী করোনার পর থেকে অনুপস্থিত রয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল আমিন বলেন, শ্রীপুরে করোনার আগে ৩৬ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো কিন্তু করোনার পরে উপস্থিত হচ্ছে ২৫ হাজার ২৫৩ জন শিক্ষার্থী। যা শতকরা ৭০ ভাগ। বাকি ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী নানা কারণে উপস্থিত হচ্ছে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো বাল্য বিবাহের শিকারও হয়ে থাকতে পারে।
গাজীপুর জেলা মাধ্যামিক শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান সরকার জানান, করোনা মহামারিতে দীর্ঘ ছুটির কারণে প্রতিটি বিদ্যালয়েই ১০ থেকে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কমেছে। আমি নিজে স্কুলে বসে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, স্কুল কর্তৃপক্ষ কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ করতে পারছে না। অভিভাবকদের পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো তারা আর স্কুলে ফিরবে না। কোনো কারণে হয়তো তারা গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। মূল সমস্যা চিহ্নিত করে তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিএসডি /আইপি