সাধারণত একটি রাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনার সৃষ্টি করে,মূলত এ বিশ্ববিদ্যালয়টিই বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটায়। বাঙালী জাতির রাজনীতি-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ঢাবির স্নাতকদের অবদান অসামান্য। একজন শিক্ষার্থীকে মৌলিক মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে অবলোকন করেছি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয় মফস্বল থেকে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষন করলে বুঝা যায় তাদের পোশাক পরিচ্ছদ, কথাবার্তা গ্রামীণ পরিবেশের ছাপ দৃশ্যমান। তবে একথাও সত্য নবীনদের আর্থিক অবস্হা সম্পূর্ণ না হলেও বা কেতাদুরস্ত না হলেও তারাই কিন্তু ঐ গ্রামের বা স্থানীয় বিদ্যাপীঠের সেরা ছাত্রছাত্রী। মফস্বলের মেধাবী মুখ গুলোয় সময়ের পরিক্রমায় তারাই দেশ মাতৃকার চালিকা শক্তি।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভূদয় ঘটে যাঁর মাধ্যমে সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি অভিধায় সিক্ত বাঙলি জাতির মহানায়ক, জাতির স্হপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শৈশব কৈশোরে বেড়ে উঠেছিলেন বাঙলার এক শস্য শ্যামলা গ্রাম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। মফস্বল থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাপিত জীবন বোধই তাঁকে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছে বলে মনে করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও শৈশব কেটেছে গ্রামীণ জনপদ টুঙ্গিপাড়ায় তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গ্র্যাজুয়েট যাঁর নিরলস পরিশ্রমে বাংলাদেশ আজ উন্নতির মহাসোপানে ধাবমান। বাংলাদেশে এখনো দেশের শীর্ষস্হানীয় বুদ্ধিজীবী,রাজনীতিবিদ,সচিব, প্রশাসক, বিচারক,বিজ্ঞানী,সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী,বিমানবাহিনী,পুলিশ, শীর্ষ ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ব্যাংকার,সাংবাদিক,প্রকৌশলী, আইনজীবী, প্রযুক্তিবিদ ও অন্যান্য পেশাজীবীদের নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় রয়েছে গ্রামীণ পরিবেশে জন্ম নেওয়া মেধাবী ঢাবি শিক্ষার্থীরাই।
শিক্ষার্থীরা সাধারণত প্রথমবর্ষে গণরুমে উঠার মাধ্যমে তাদের হল জীবন শুরু করে।বলাবাহুল্য একরুমে ১৫/২০ জন বা তথাধিক শিক্ষার্থী গণরুমে একসঙ্গে থেকে কিভাবে তাদের পড়াশোনা ও স্বভাবিক জীবন চালিয়ে নেয় তা এক বিস্ময়কর ব্যাপার বলে মনে হয়। ঢাবি শিক্ষার্থীরাদের এমন হল ও আছে যেখানে বৃষ্টি হলে সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে পরের দিন ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। অবাক করা ব্যাপার বৃস্টিস্নাত নির্ঘুম রাত কাটিয়ে বা সারারাত ছাড়পোকার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে ঢাবি জীবন অতিবাহিত করা আজ তাঁরাই প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যাক্তি।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনন বিকাশে শ্রেণীকক্ষের পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন যেমন-রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, ট্যুরিস্ট সোসাইটি, সাংবাদিক সমিতি, নাট্য সংসদ, কুইজ সোসাইটি, আইটি সোসাইটি, পরিবেশ সমিতি, রিডিং ক্লাব, রিসার্চ সোসাইটি সহ এধরনের নানা সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা পরবর্তী কর্মজীবন পরিচালনা ঢাবি স্নাতকদের সহজ করে দিয়েছে। মফস্বলের একজন নবীন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে কালক্রমে নানা দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে সেই শিক্ষার্থীর আতুরঘর ফেলে আসা গ্রাম ও তার গ্রামীণ বিদ্যালয়ের সমাজ-সংস্কৃতি- অর্থনীতির বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে গ্রাম উন্নয়নে নিরন্তর অবদান রেখে চলছে ঢাবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষাথীরা। যার মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদের চিত্র ক্রমান্বয়ে উন্নতি সাধিত হচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
এ জন্যই বলা যায় একটি জাতির সমন্নিত চিন্তা, মেধা মনন বিকাশে অসামান্য অবদান রেখে চলছে শতায়ুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। নিরন্তর শুভ কামনা এ জনপদের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি।
লেখক- মুহাম্মাদ মাছুদুর রহমান
পিএইচ.ডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
mobinmasuddu@gmail.com