চট্টগ্রাম ব্যুরো:
চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতুর উত্তর পশ্চিম পাশ ঘিরে সড়ক ও জনপথের সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছে অবৈধ বাস-ট্রাক টার্মিনাল। সেখানে চালকেরা তাঁদের মর্জিমাফিক গাড়িগুলো দাঁড় করিয়ে রেখেছেন ব্রীজ লাগোয়া ও সড়কের দুই পাশ দিয়ে। ফলে একদিকে যেমন ঝুঁকিতে রয়েছে এই সেতুটি অন্যদিকে কোতোয়ালী যাওয়ার সড়কটি সংকীর্ণ হয়ে গেছে। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।
কোতোয়ালী চাক্তাই ট্রাক কার্ভাডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম দুলালসহ একটি অপরাধীচক্র প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ স্ট্যান্ডটি গড়ে তুলেছে। আর এসব অনৈতিক কাজের ভাগের অংশ যাচ্ছে সড়ক ও জনপথের অসৎ কর্মকর্তাদের পকেটেও।
তবে ভাগের বিষয়টি অস্বীকার করে চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, অসহায়ত্বের কথা। তিনি বলেন আমাদের প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব রয়েছে তাই তাদের সাথে পেরে উঠছিনা। আজকে উচ্ছেদ করলে কাল আবার আরেক গ্রুপ এসে দখল করছে তাই এখন আর উচ্ছেদ করছিনা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতু লাগোয়া সড়ক ও জনপদের বিশাল জায়গা দখল করে চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ক্যাভার্ডভ্যান ও মিনি ট্রাক মালিক গ্রুপ নাম ব্যবহার করে ‘নতুন ব্রিজ ট্রাক টার্মিনাল’ গড়ে তোলা হয়েছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, ট্রাক টার্মিনালটিঅবৈধ। প্রায় দুই বছর ধরে ওই জায়গায় ট্রাক-বাস, মিনি ট্রাক ও কার্বার্ডভ্যান পার্কিং করে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ চাঁদা আদায় করছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা টার্মিনালটিতে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান পার্কিং করা হয়। প্রতি ট্রাক থেকে দেড়শ টাকা এবং কাভার্ডভ্যান থেকে আড়াইশ টাকা নেয়া হয়।
টার্মিনাল ঘিরে চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বালু মহাল, চা নাস্তা ও তেলের দোকান। সেখানে চলে মদ-জুয়ার আসর। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের যাওয়া-আসা রয়েছে সেখানে। অবশ্যই কাতোয়ালী চাক্তাই ট্রাক কার্ভাডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম দুলাল এ প্রতিবেদককে বলেছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ না করে কি এরকম অবৈধ টার্মিনাল চালু রাখা যায়। খবর নিয়ে জানা গেছে, টার্মিনালটি ঘিরে ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে নজরুল ইসলাম দুলাল। তারা এলাকায় হেন অপরাধ নেই করছে না। তাদের কাছে এলাকার লোকজনরাও অসহায়। তারা এলাকায় চুরি, ডাকাতি,ছিনতাই এবং ভূমি দখলের মতো অপরাধগুলো করছে। অভিযোগ উঠেছে, সড়ক ও জনপদের অফিসে অবস্থান নিয়ে অবৈধ ট্রাক টার্মিনালটি পরিচালনা করছে নজরুল ইসলাম। অবৈধ ট্রাক টার্মিনাল থেকে আয়ের বড় একটি অংশ যায় সড়ক ও জনপদের কর্তা ব্যক্তি থেকে শুরু করে অনেকের পকেটে।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাহ আমানত সেতু থেকে কোতোয়ালী থানামুখী প্রধান সড়কে ছিল প্রচণ্ড যানজট। বিশৃঙ্খলভাবে বাস-ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখায় সড়ক ও জনপদ অফিস ও ভেড়া মার্কেটের কাছে সড়ক এতই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে যে সেখান দিয়ে একটির বেশি বাস যেতে পারছে না। এসব বাস প্রবেশ করবে চট্টগ্রাম নগরের দিকে।
ভুক্তভোগী লোকজন বলেন, সড়ক ও জনপদের জায়গা এবং সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ ট্রাক-কার্ভাডভ্যান স্ট্যান্ডের জন্য এই যানজট হচ্ছে। প্রতিদিন স্ট্যান্ডটিতে বাড়ছে গাড়ি। এখন থেকে এই প্রধান সড়কটির অবৈধ টার্মিনাল উচ্ছেদ না করা হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ ও বেরোতেই সব দূরপাল্লার পরিবহনের কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে।
অবৈধ টার্মিনালের নিয়ন্ত্রক নজরুল ইসলাম দুলালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখানে একটা ট্রাক টার্মিনালের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এখনো অনুমোদন মিলেনি। অনুমোদন না পাওয়ার পরও কেন সেখানে টার্মিনাল গড়ে তোলা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, থানা পুলিশ, ট্রফিক পুলিশ, সড়ক ও জনপদের অফিসারদের টাকা দিয়ে টিকে রয়েছি। পারলে আপনিও আসেন। থানা পুলিশ টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে স্থানীয় চাক্তাই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কারিমুজ্জামান বলেন আমরা তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেইনা। এগুলো সরকারী জমি দেখবালের জন্য সংশ্লিষ্ট দঢুর আছে ওষানে আমাদের কোন কাজ নেই।
দখল বিষয়ে সরকারী দফতর আমাদের কাছে সহযোগীতা চাইলে আমরা এগিয়ে আসবো। অবৈধ টার্মিনাল থেকে ট্রাফিক পুলিশের টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে টিআই বাকলিয়া মো. মুকিতের মোবাইলে একাধিকবার কল ও বার্তা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান বলেন, ‘যেভাবে শহরের যত্রতত্র বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে, একে অরাজকতা ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। এখন রাজনৈতিক নেতাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা কেমন নগর দেখতে চান। প্রশাসনকেও পরিকল্পনা করতে হবে, কেমন নগর গড়তে চান। তা না হলে মানুষ কেবল কষ্টই ভোগ করে যাবে।
বিএসডি/ জএ