আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
‘তাইওয়ান চীনের সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামতে চায় না। তবে নিজেকে রক্ষা করবে এবং চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।’ বুধবার স্বশাসিত এই দ্বীপ ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পার্লামেন্টে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছে।
গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত এই দ্বীপকে নিজেদের বলে দাবি করে আসা চীনের সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে তাইওয়ানের। তাইপেকে চীনা সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে বাধ্য করতে সামরিক এবং রাজনৈতিক চাপও বৃদ্ধি করেছে বেইজিং। সম্প্রতি তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে চীনা যুদ্ধবিমান বারবার অনুপ্রবেশ করছে; যা উদ্বেগ বাড়িয়েছে ওই অঞ্চলে।
চীন সামরিক আধুনিকায়ন কর্মসূচি মাঝপথে রয়েছে; দেশটি নতুন নতুন বিমানবাহী রণতরী এবং স্টিলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করছে। অন্যদিকে তাইওয়ানও সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করেছে; বিশেষ করে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাবমেরিন তৈরিতে।
সংসদে দেওয়া প্রতিবেদনে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর এবং অস্থিতিশীল’ বলে বর্ণনা করেছে। একই সঙ্গে তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপকে ‘উসকানি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, তাইওয়ান চীনা কমিউনিস্টদের সামরিক বাহিনীর সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় জড়াবে না এবং প্রণালীজুড়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আশায় সামরিক সংঘাত চাইবে না।
‘কিন্তু আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে চীনা কমিউনিস্টদের হুমকির মুখে আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো এবং কখনোই চাপের মুখে নতি স্বীকার করবো না।’
তাইওয়ান এবং চীনের মধ্যে সংঘাত শুরু হলে তা দ্রুত থামানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। চীনা বিমান এবং জাহাজের ওপর নজরদারি চালানোর জন্য তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করবে; যাতে আগেই প্রতিক্রিয়া দেখানো যায়। এছাড়া সামরিক বাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করবে; আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের পুরোপুরি অবহিত করার জন্য এটি করা হবে।
বুধবার বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চীনের সরকারি একজন মুখপাত্র তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঠেকাতে এবং
এই দ্বীপ ভূখণ্ডকে চীনের শাসনের আওতায় নেওয়ার জন্য বেইজিংয়ের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে এসবই শান্তিপূর্ণভাবে করতে বেইজিং বেশি স্বস্তিবোধ করবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
চীনের তাইওয়ানবিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র মা জিয়াওগুয়াং বলেছেন, আমরা বলপ্রয়োগের নীতি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ান বলছে, এটি একটি স্বাধীন দেশ এবং আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষা করবে।
তাইওয়ানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা ঘিরে সংঘাত শুরু হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কোনও ধরনের সংঘাত শুরু হলে তা চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে মার্কিন ফরেইন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীতে লেখা নিবন্ধে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন তাইওয়ানের পতন হলে তা এশীয় অঞ্চলে ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ ডেকে আনবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন। তিনি বলেন, যদি তাইওয়ানের গণতন্ত্র এবং জনগণের জীবন হুমকির মুখোমুখি হয়; তাহলে নিজেদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে তাইওয়ান।
তাইওয়ানকে নিজেদের একটি প্রদেশ হিসেবে মনে করে চীন এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে তা দখলে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে দেশটি। সাই ইং-ওয়েন নেতৃত্বাধীন সরকারকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে মনে করে চীন। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট সরকার চীনের শাসন ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সূত্র: রয়টার্স।