জবি প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাসের প্রকোপে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অধ্যয়নরত বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের আটকে থাকা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা প্রায় দেড় বছর পর ৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে সশরীরে নেয়া শুরু হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে পরীক্ষা নেয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। পরীক্ষার দিনগুলোতে আগের সময় অনুযায়ী সব রুটে শিক্ষার্থীদের বাস চলাচল করবে।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোর ক্লাসরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে, বিভাগের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে ধোয়া হচ্ছে। এছাড়াও পরীক্ষার দিনগুলোতে অপ্রয়োজনে কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় (প্রক্টোরিয়াল বডি) কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিভাগের মেঝেগুলো ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ধোয়া হয়েছে। ক্লাসের বেঞ্চগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। পরীক্ষার সময় কোনো শিক্ষার্থী মাস্ক না নিয়ে এলে মাস্কেরও ব্যবস্থা আছে। প্রত্যেক রুমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া থাকবে। পরীক্ষার রুমে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেক সিটে একজন করে শিক্ষার্থী বসবে। বিভাগে একটি কমিটি করে দিয়েছি। তারা সব পর্যবেক্ষণ করবে, আমরাও থাকব।’
পরীক্ষার প্রস্তুতির বিষয়ে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘প্রত্যেক বিভাগকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সরকারি যে নির্দেশনাগুলো আছে সব মেনে পরীক্ষা নেয়া হবে। প্রত্যেক বিভাগ আলাদা আলাদা রুটিন দিয়েছে। সকালে ও বিকেলে দুই শিফটে পরীক্ষা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক রুমে ২০ থেকে ৩০ জন এবং এক বেঞ্চে একজন করে বসবে। এভাবে করে স্বাস্থ্যবিধি মানার যে নিয়মকানুন সব মেনে সেভাবে রুটিন তৈরি করা হয়েছে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, রুটিন অনুযায়ী নিয়মিত পরীক্ষা নেয়া হবে।’
রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বেশি ভিড় যাতে না হয়, সেটি বিবেচনায় রেখে রুটিন তৈরি করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ. কে. এম. আক্তারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরীক্ষা নেয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নেয়ার সকল প্রস্তুতি নিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের যা যা করণীয় তা করা হয়েছে। যথারীতি সকল শিক্ষার্থীদের হাতে এডমিট কার্ড পৌঁছে দিতে তা প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র খাম ও সিল সহ পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের আওতাধীন যে হল গুলো রয়েছে সেগুলোও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। সেখানে যথারীতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা সকালে ও বিকেলে দুই শিফটেই অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, কোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে দুই জন শিক্ষার্থীকে কেরানিগঞ্জ জেলখানায় পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। তাছাড়া আরো দুই জন পরীক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ফিন্যান্স বিভাগের একজন সন্তান সম্ভাব্য ও একজন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী যিনি দুর্ঘটনায় পা ভেঙে ফেলেছেন। তাদেরকে মেডিক্যাল সেন্টারে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এ ব্যাপারে মেডিক্যাল সেন্টারের উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা মিতা শবনমকে অবহিত করা হয়েছে।
প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, যাদের পরীক্ষা তারাই যেন ক্যাম্পাসে আসে। এটি আগে থেকেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ভীড় কম থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সচেতন। আমি মনে করি যে তারা সকল নিয়মকানুন মেনে চলবে। যারা জেলখানায় পরীক্ষা দিবে, সেখানে তাদের বিভাগীয় শিক্ষকরা যাবেন।
এদিকে পরীক্ষার্থীদের জন্য ৭ অক্টোবর থেকে সপ্তাহে ছয় দিন দৈনিক চলমান যানবাহনগুলো আগের কর্মদিবসের মতো যথারীতি একই সময় যাত্রা শুরুর স্থান থেকে সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে এবং ক্যাম্পাস থেকে স্ব-স্ব রুটে বিকেল ৪টায় ছেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে জবির পরিবহনবিষয়ক প্রশাসক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সকাল ৮ টায় যেন সব বাস ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছায় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে। আগের কর্মদিবসের মতো যথারীতি একই সময় যাত্রা শুরুর স্থান থেকে সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস প্রবেশ করবে। দূরপাল্লার বাসগুলোও চলাচল করবে।
বিএসডি/শেখ শাহরিয়ার হোসেন /আইপি