ডা. নুসুর আক্তার
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের এক রোগীর হিস্ট্রি নিচ্ছিলাম। রোগীকে জিজ্ঞেস করলাম, স্বামী ছাড়া অন্য কারও সাথে কখনও মেলামেশা করেছেন কিনা?
– রোগী বলল, ‘আপা, যার সাথে পড়ছি তারে নিয়াই মরছি!’
– আমিতো শুনে মুগ্ধ!
তারপর আমার রোগী ‘যারে নিয়া পড়ছে’ তারেও একই প্রশ্ন করলাম (অবশ্যই আলাদা ভাবে), খারাপ জায়গায় যাওয়া আসার অভ্যাস আছে? সেই লোক স্বীকার করল কয়েকবার গিয়েছিল, তবে পাঁচ/ ছয় বছর আগে। আর আমার রোগীর মূল উপসর্গ, সহবাসের পর রক্তক্ষরণ সেটা শুরু হয়েছে চার/পাঁচ বছর ধরেই!
চলুন দেখে নেয়া যাক জরায়ুমুখের ক্যান্সার কাদের হতে পারে, এমন লিস্টের প্রথম দিকে কারা আছে? মানে হাই রিস্ক গ্রুপ কারা?
মহিলাদের মধ্যে:
১. যারা Human papilloma Virus দ্বারা আক্রান্ত। এই ভাইরাস সেক্সুয়ালী ছড়ায়।
২. early sexual intercourse./early age of marriage.
৩. অল্প বয়সেই প্রথম সন্তান লাভ (১৬ বছরের আগে)।
৪. অনেকগুলো বাচ্চা হওয়া/ঘন ঘন বাচ্চা হওয়া।
৫. নিম্নবিত্ত শ্রেণি
৬. অপরিচ্ছন্নতা
৭. সিগারেট খেলে
৮. different sexual partners.(both husband, wife)
৯. সাধারণত পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে যারা জন্মবিরতিকরণ পিল খেয়ে যাচ্ছে।
১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, poor immune system যেমন- এইডস আক্রান্ত রোগী কিংবা যারা এমন কোন ওষুধ খায় যেগুলো খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
১১. malnutrition
১২. chlymadial infection
১৩. আগের বউ জরায়ুমুখ ক্যান্সারে মারা গেলে পরের বউ রিস্কের মধ্যে আছে!
বলা হয়ে থাকে মুসলিম ও জিউস যারা ছোট বেলায় সারকামসিশন (মুসলমানি) করেছে তাদের বউরা তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে থাকে তবে এর খুব জোরালো ভিত্তি নেই যদিও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা অবশ্যই আছে।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার চিন্তা করলে রোগীর এসব ইতিহাস জানতে হবে। আরও জানতে হবে, মাসিক ছাড়াও মাঝে মাঝে রক্তপাত হয় কিনা অথবা সারা মাস ধরেই একটু একটু ব্লিডিং হয় কিনা। গন্ধযুক্ত কোন ডিসচার্জ যায় কিনা, তলপেটে ব্যথা হয় কিনা বিশেষ করে সহবাসের সময়, পায়খানা প্রস্রাবের সমস্যা আছে কিনা, পায়খানা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যায় কিনা ইত্যাদি।
আরও জানা জরুরি পরিবারের কারও কখনো এই অসুখ হয়েছিল কিনা। যেমন- মা, বোন। খাবার দাবারের কথাও জানতে হবে।
শুধুমাত্র সচেতনতাই পারে এই অসুখকে দূরে সরিয়ে রাখতে। ২৫ বছর থেকেই জরায়ুমুখ পরীক্ষা করানো শুরু করুন। বাচ্চার বয়স ১২/১৩ হলেই এই ক্যান্সারের ভ্যাক্সিন দিয়ে দিন। তবে হ্যাঁ! ভ্যাক্সিন দিলেই যে এই রোগ আর কখনোই হবে না এমনটা কিন্তু না। ভ্যাক্সিন কিছুটা প্রিভেন্ট করবে কিন্তু পুরোটাই না। কাজেই ভ্যাক্সিন দিলেও রুটিন স্ক্রিনিং করাতে হবে।
ডা. নুসুর আক্তার
মেডিকেল অফিসার