নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনা পরিষদে দুর্নীতি ও হয়রানিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জাতীয় মহিলা সংস্থায় অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযানে দুর্নীতি ও হয়রানির সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া মনিরুজ্জামান নামে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে বলেও জানা গেছে।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বেইলী রোডে দুদকের সহকারী পরিচারক শাহ আলমে শেখের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অভিযান পরিচালনা করে। টিমের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ ও উপসহকারী পরিচালক আফিয়া খাতুন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় মহিলা সংস্থার ঢাকা অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মঞ্জুরিকৃত সিলেকশন গ্রেড ও উচ্চতর গ্রেডের বকেয়া বেতন ভাতা প্রদান না করে হয়রানির অভিযোগের আজ এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়।
তিনি বলেন, অভিযানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে যুক্ত মোট ১৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আদালতে দায়েরকৃত রিটের আদেশ অনুযায়ী রাজস্ব খাতভুক্ত হন। দুদক টিম দেখতে পায়, অভিযোগকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিকৃত ও প্রাপ্য সিলেকশন গ্রেডের ভাতাদি প্রদান না করে তাদের আবেদনগুলো অধিকতর যাচাইয়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। যদিও একই সময়ে সিলেকশন গ্রেডের ভাতার প্রাপ্যতা অনুযায়ী অপর এক কর্মকর্তা ভাতাদি রাজস্ব বাজেট হতে পরিশোধ করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে অনিয়ম, হয়রানি বা অনৈতিক লেনদেন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। সার্বিক রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে টিম শিগগিরই কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানা গেছে। অন্য একটি সূত্রে জানা যায় প্রাপ্য সুবিধা পাওয়া ব্যক্তির নাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান।
অন্যদিকে নিজ অফিসের সহকর্মীদের হয়রানি করার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শাহানা সারমিন অস্বীকার করে বলেন, এখানে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। তারা প্রজেক্ট থেকে রাজস্ব খাতে আসার কারণে কিছু জটিলতা হয়েছে। আমরা বিষয়টি ইতিবাচক দেখতেছি, আশা করছি তাদের বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।
মনিরুজ্জামান নামের এক কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই দায়িত্বে নতুন। তার দুর্নীতির প্রসঙ্গে আমার জানার নেই। প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেব।
মহিলা সংস্থা ও দুদক অফিস থেকে জানা যায়, মহিলা সংস্থার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বেতন সিটে ফ্লুইড দিয়ে ফিক্সেশন ব্যতীত বেতনের সাথে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট গ্রহণসহ অনিয়ম করে। বিভাগীয় তদন্তে সত্যতা পাওয়ার তাকে ২০০০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। কিন্তু মহিলা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের ঘুষ দিয়ে ফেল চাকরি ফিরে পায়। দুর্নীতির শাস্তি পেলেও তার দুর্নীতি থেমে নেই। ২০২৪ সালের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতার বিপরীতে আয়কর ও স্ট্যাম্প ফি বাবদ কয়েক লাখ টাকা সরকারি ফান্ডে জমা না দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মনিরুজ্জামান। যদিও দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম তাকে অফিসে উপস্থিত পায়নি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় মহিলা সংস্থার বর্তমান নির্বাহী পরিচালক শাহানা শারমিন, সাবেক পরিচালক মেহেরুন্নেসা কবির ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবসরে যাওয়া চার কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন কর্মচারীদের বকেয়া ভাতা প্রদানে দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ওই চারজন কর্মকর্তা বছরের পর বছর ধরে অফিসের টেবিলে টেবিলে ধন্না দিয়েও প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। হিসাব বিভাগ থেকে শুরু করে পরিচালক কিংবা নির্বাহী পরিচালক পর্যন্ত সবার কাছে সাহায্য চাইলেও নানা অজুহাত দেখিয়ে হয়রানি করা হয়। এমনকি গত বছরের ১৭ নভেম্বর একই অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক থেকে চিঠি দেওয়া হলেও মহিলা সংস্থা থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং দুদকের চিঠিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।