নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি। এরই মধ্যে উপকূলজুড়ে সুন্দরবন কেন্দ্রীক কর্মজীবীদের মাঝে বেড়েছে সকল ধরনের কর্মচঞ্চলতা। ফলে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা উপকূলে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বনজীবী ও পর্যটন-নির্ভর ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নৌকা-ট্রলারের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বনজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা। অনেকেই ব্যস্ত সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র নেওয়ার জন্য। পশ্চিম সুন্দরবনের বনবিভাগের রেঞ্জ অফিসগুলোতে বুধবার সকাল থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতিপত্র গ্রহণে জেলে ও ট্রলার মালিকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
জেলার সর্ব দক্ষিণের উপজেলা শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার চাঁদনীমুখা গ্রামের বনজীবী ইউনুস বলেন, দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকার কারণে খেয়ে না খেয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে গেছি। সুন্দরবন খুলে দিয়েছে। এখন অভাব অনটন কিছুটা হলেও কমবে।
বনজীবী খানজাহান আলী বলেন, সবার আগে পাস নিতে এসেছি। দীর্ঘ তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ ছিল। অনুমতি নিয়ে আগে যেতে পারলে বেশি মাছ পাব এজন্য আগে এসেছি। অন্যদিকে, পর্যটন শিল্পকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ইতিমধ্যে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা নতুন নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। ট্রলারগুলোকে নতুন নতুন রঙে সাজিয়ে তুলেছেন অনেকেই। দীর্ঘ করোনাকালীন পরিস্থিতি ও বন্ধের সময় পেরিয়ে পর্যটকদের সুন্দরবন আকৃষ্ট করার জন্যই এমন সুসজ্জা বলে জানাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা।
মান্দারবাড়িয়া এক্সপ্রেসের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার সময় বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞায় সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারেননি কোনো পর্যটক। করোনা পরিস্থিতি শিথিল হলেও বনবিভাগের টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞায় এই শিল্পটা প্রায় ধ্বংসের মুখে পৌঁছে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার থেকে সুন্দরবনের দয়ার খুলছে। এই সময়ে আমরা এই শিল্পটাকে উজ্জীবিত করতে চাই। তিনি আরো জানান, পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে অনেকেই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য। এই সুবিধাটাকে আমরা এই শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে চাই।
মুন্সীগঞ্জ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান আনিস বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলে বাওয়ালি পর্যটক কেউ-ই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেননি। জেলে বাওয়ালিদের সাথে ট্রলার মালিকসহ সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে যুক্ত শ্রমিকদেরও দুর্দিনে কেটেছে এসময়। তিনি আরো জানান, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে শতাধিক পর্যটন ট্রলার আছে। আশা করছি পর্যটকদের সেবার কমতি হবে না।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জ অফিসের সন্নিকটের অফিস কলাগাছিয়াকে সাজানো হয়েছে নানান রুপে। করমজল থেকে সংযুক্ত হয়েছে তিনটি কুমির। সংস্কার হয়েছে ফুট-ট্রেলসহ পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর রাস্তা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পকে আরো আকর্ষণীয় করতে আমরা সজাগ আছি। এজন্য দর্শণার্থীদের ভ্রমণকে সুন্দর ও সার্থক করতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া সুন্দরবনের পর্যটন স্পট গুলোতে আরো নতুন কিছু সংযোজন করার কথাও জানান ওই কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে মাছ ও কাঁকড়া আহরণ ও বোর্ড লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) আছে দুই হাজার ৯০০টি। যার মধ্যে নবায়ন হয়েছে ২৭৯৬টি। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ১০৪টি। এছাড়া মধু-মোম সংগ্রহের বিএলসি ৩০০টি, গোলপাতা ২৮টি ও লবণ পানির রয়েছে ১০টি বিএলসি।
শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় নিবন্ধিত ২৩ হাজার জেলে-বাওয়ালি রয়েছেন। এদের মধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী জেলে রয়েছেন ৭৯৫ জন। এছাড়া শ্যামনগর উপকূলের বেশিরভাগ মানুষ সুন্দরবনের সাথে যুক্ত। উল্লেখ্য, গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশে সুন্দরবনে সবার জন্য প্রবেশের অনুমতি বন্ধ রেখেছিল বনবিভাগ। প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে সকলের জন্য নিয়ম মেনে উন্মুক্ত হয়েছে সুন্দরবনের দুয়ার।