চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা হারানোর দিনেই সিলেটে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন লিটন দাস। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন তানজিদ হাসান তামিম। দুজনের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের নজিরসহ আরও বেশ কিছু রেকর্ডও হয়েছে আজ।
রেকর্ডবুক ওলট-পালটের দিনে জোড়া সেঞ্চুরিতে ১ উইকেটে ২৫৪ রানে থেমেছিল ঢাকা ক্যাপিটালস। জবাবে মাত্র ১০৫ রানেই গুটিয়ে গেল দুর্বার রাজশাহী। তাতে ১৪৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পেল শাকিব খানের দল।
এবারের বিপিএল মাঠে গড়ানোর আগে থেকেই ঢাকা ক্যাপিটালসকে নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। কারণটাও নিশ্চয়ই কারও অজানা নয়। ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান যে আছেন দলের মালিকানায়। যদিও মাঠের খেলায় একের পর এক হতাশাই উপহার দিচ্ছিল ঢাকাইয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। টানা ষষ্ঠ হারে খাদের কিনারায়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কম ট্রল হয়নি ঢাকাকে নিয়ে। কেউ কেউ এমনও বলছিলেনন, এবার বুঝি ব্যাট নিয়ে শাকিব খানকেই নেমে পড়তে হয় কি না!
এর মধ্যেই আচমকা ‘তুফান’ সিলেটের মাটিতে। এবার শাকিবের দল ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে তুফান ছোটালেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। দুই ব্যাটারের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে তছনছ হয়ে গেছে বিপিএলের রেকর্ডবুক।
আজ (রোববার) সিলেটে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে বিপিএলের ম্যাচে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান ঢাকা ক্যাপিটালসের ওপেনার লিটন দাস। ৮ চার ৭ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে ৪৪ বলে তুলে নেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম এবং বিপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুতগতির সেঞ্চুরি এখন লিটনের। এই রেকর্ড ভাগাভাগি করছেন ক্রিস গেইলের সঙ্গে। ইউনিভার্স বস খ্যাত গেইল ৪৪ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০১২ সালে, সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে। লিটনও সমানসংখ্যক বল খেলে সেঞ্চুরি পেলেন। বিপিএল ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি আহমেদ শেহজাদের। ২০১২ সালেই রাজশাহী ফ্র্যাঞ্চাইজির বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র ৪০ বলে।
রেকর্ডের পাতায় অবশ্য নাম তুলেছেন তার সঙ্গী তানজিদ হাসান তামিমও। লিটন দাসের সঙ্গে তিনিও হয়েছেন ইতিহাসের অংশ। সেঞ্চুরি পেয়েছেন ইনিংসের শেষ ওভারে। ১০৮ রানে ফিরে গিয়েছেন তিনি। তবে ফেরার আগে নিশ্চিত করেছেন মাত্র দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিপিএলে একের বেশি সেঞ্চুরি। তামিম ইকবালের সঙ্গে বিপিএলে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২টি সেঞ্চুরি এখন তানজিদ তামিমের। বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ডও এখন এই দুজনের। পেছনে ফেলেছেন ২০১৭ আসরের ফাইনালে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবং ক্রিস গেইলের ২০১ রানের জুটি। তানজিদ তামিম এবং লিটন কুমার দাস আজ করেছেন ২৪১ রান। এই জুটিই ভেঙেছে বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড।
দুর্বার রাজশাহীর বোলারদের তুলোধুনো করে ঢাকা ক্যাপিটালস শেষ পর্যন্ত থামে ১ উইকেটে ২৫৪ রান নিয়ে। বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানটাও এখন ঢাকা ক্যাপিটালসের দখলে। পেছনে পড়েছে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্সের ২৩৯ রানের রেকর্ড। এ ছাড়া প্রথম উইকেটে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ। আইপিএলে এর আগে বিরাট কোহলি এবং এবি ডি ভিলিয়ার্স ১ম উইকেটে তুলেছিলেন ২২৯ রান।
জবাব দিতে নেমে রানের সমুদ্রে হাবুডুবু খেয়েছে দুর্বার রাজশাহী। প্রথম ইনিংসে যেখানে ঢাকার ব্যাটাররা বোলারদের কচুকাটা করেছেন, সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ল রাজশাহীর ব্যাটিং লাইন-আপ। প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন মোহাম্মদ হারিস। ৫ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন পাকিস্তানি ব্যাটার। তিনে নামা অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফিরেছেন।
পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান তোলে রাজশাহী। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই যেন হেরে বসে দুর্বার রাজশাহী। শেষ দিকে রায়ান বার্ল কিছুটা লড়াই চালিয়েছেন। তাতে হারের ব্যবধান কমেছে শুধু। বার্ল ৩২ বলে ৪৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন। রাজশাহী অলআউট হয়েছে ১০৫ রানে। ১৪৯ রানে জিতেছে ঢাকা ক্যাপিটালস। ঢাকার হয়ে ২টি করে উইকেট তুলেছেন মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, আবু জায়েদ রাহি, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এবং ফারমানউল্লাহ। ১ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান।