অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে এখনো অনেকে টিকাকেন্দ্রে যাচ্ছেন। কিন্তু টিকা যেহেতু নেই, সেহেতু তাঁদের ফিরে আসতে হচ্ছে।
রাজধানীর ৪৭ টিকাকেন্দ্রের ২৫টিতে এখন টিকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কোন কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে আর কোন কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে না, তা সাধারণ মানুষ জানে না। এ ছাড়া ৩৯টি জেলায় টিকা ফুরিয়ে গেছে। এসব জেলা সদরে ও উপজেলা হাসপাতালে টিকা ফুরিয়ে যাওয়ার কথা অনেক মানুষ জানে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে অপেক্ষায় থাকা মানুষের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে টিকা কেন্দ্রে না যেতে বলে দিলেই ভোগান্তি দূর হবে। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে প্রচার চালানোও যেতে পারে।
একজন গণমাধ্যমকর্মী গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর আজিমপুরের মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। ওই দিন টিকা কার্ডে ৫ জুন দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে বলে লিখে দেওয়া হয়।
নির্ধারিত দিন সকালে মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে গিয়েছিলেন ওই গণমাধ্যমকর্মী। টিকাকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান টিকা নেই।
এক দিন পর, অর্থাৎ ৬ জুন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুজন কর্মকর্তা রাজধানীর তেজগাঁওয়ের জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। কেন্দ্রে একটি কাগজে লেখা ছিল, ‘সরবরাহ না থাকায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ’। অন্য কাগজে লেখা ছিল: ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আসামাত্র এসএমএসের মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে’। ওই দুই ব্যক্তি প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছিলেন গত ৫ এপ্রিল।
দেশে এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪২ লাখ ২৩ হাজার ১৭৮ জন। প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো টিকা সরকারের কাছে নেই।
করোনা টিকা কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচি। কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, ‘মুঠোফোনে মেসেজ না পেয়ে অনেকে টিকাকেন্দ্রে যাচ্ছেন। আবার অনেকে নির্ধারিত দিনের পরে টিকা নিতে যাচ্ছেন। এঁরা টিকা না পেয়ে ফিরে আসছেন।’
তবে এভাবে কত মানুষ টিকা না পেয়ে ফেরত আসছেন, তার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় ডোজের আগেই সনদের খুদে বার্তা সাতক্ষীরার সদর হাসপাতাল থেকে গত ১৬ মার্চ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন মিতুন নাহার। টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার তারিখ ১৮ মে লিখে দেওয়া হয়।
মিতুন নাহার বলেন, তিনি নির্ধারিত দিনে টিকাকেন্দ্রে যেতে পারেননি। গিয়েছিলেন এক সপ্তাহ পরে। কর্মকর্তারা তাঁকে এক দিন পরে যেতে বলেন। তিনি কর্মকর্তাদের কথামতো সদর হাসপাতালে যান। ওই দিন বলা হয় কেন্দ্রে দেওয়ার মতো টিকা নেই।
এর দুই দিন পর মিতুন নাহারের মুঠোফোনে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া সম্পন্ন হওয়া এবং সুরক্ষা ওয়েবসাইট থেকে টিকা সনদ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বার্তা আসে। এটা কী করে হলো, তা মাথায় আসছে না মিতুন নাহারের। সদর হাসপাতালের কর্মকর্তারাও তাঁকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি খতিয়ে দেখবেন, কেন এমন হলো।
সরকার দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়া মানুষের জন্য টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দুটি দেশের কাছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে প্রথম থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মধ্যকার সময়ও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ মনে করেন, টিকাকেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়া মানুষকে দুঃখ প্রকাশ করে খুদে বার্তা পাঠানো উচিত। তিনি বলেন, মানুষকে বলা উচিত যে সরকার টিকা সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এতে মানুষের আস্থা বাড়বে।