খেলাধূলা প্রতিনিধি:
বড়সড় কিছু যে হচ্ছে, তা নেপালে বসেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে পা রাখতেই যেন বিস্ময়ের ঘোরে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। স্বপ্ন আর বাস্তবতার সঙ্গে মেলাতে পারছেন না। উৎসুক জনতার সঙ্গে সংখ্যায় হাজারের মতো মিডিয়াকর্মী; ভিড়ভাট্টা, হৈহুল্লোড়ে এক-দুই পা করে সামনে এগিয়ে যাওয়াই কঠিন। টানা ম্যাচ খেলার সঙ্গে ভ্রমণক্লান্তি; বিরল সংবর্ধনায় সাবিনার কাছে সবকিছু হয়ে যায় তুচ্ছ। ট্রফি হাতে নিয়ে সেই চিরচেনা হাসি। বিমানবন্দরে রাজসিক সংবর্ধনায় শিহরিত বাংলাদেশের এ পোস্টার গার্ল ট্রফিটা উৎসর্গ করলেন দেশবাসীকে- ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বলুন বা ১৮ কোটি কিংবা ২০ কোটি- এই ট্রফি বাংলাদেশের সব মানুষের।’
হিমালয়ের দেশে বিজয়ের কেতন উড়িয়েছেন মেয়েরা। কাঠমান্ডুতে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার জিতেছেন নারী সাফ। বীর নারীদের বরণের জন্য ছাদ খোলা বাসের ব্যবস্থা করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বাফুফের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গতকাল বিমানবন্দরে ইতিহাস গড়া মেয়েদের সংবর্ধনা দেয় মন্ত্রণালয়। সকাল থেকেই বিমানবন্দরে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
সেই ভিড় ঠেলে ভেতরে যেতেই পারছিলেন না মেয়েরা। তাই তো নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনটি তাৎক্ষণিক বাতিল করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ৩০ মিনিট পর ভিভিআইপি গেটের একটু সামনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ওমেন্স কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের সঙ্গে ট্রফি হাতে নিয়ে সামনে আসেন অধিনায়ক সাবিনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণা রানী সরকার ও মারিয়া মান্ডা। মেয়েদের চোখের সামনে দেখে ঐতিহাসিক মুহূর্তটি রাঙানোর জন্য গতকাল হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী এসেছিলেন বিমানবন্দরে। দেশের মানুষের ভালোবাসায় এবং বিরল সংবর্ধনায় অভিভূত সাবিনা, ‘আমাদেরকে এত সুন্দর করে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। মন্ত্রী মহোদয় ও ফেডারেশনের যাঁরা এসেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের মেয়েদের, বাংলাদেশের ফুটবল যে আপনারা এত ভালোবাসেন, এসব দেখে আমরা অনেক অনেক গর্বিত।’
মেয়েদের সাফে বাংলাদেশের শিরোপাজয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সাবিনা আট গোল করে সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের সঙ্গে জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হওয়ার পর এবার সামনে তাকিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘আমাদের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন স্যার, সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা, মন্ত্রী মহোদয়ের সহায়তায় ২০১২ সাল থেকে মহিলা ফুটবল ভালোভাবে চলছে। মেয়েদের পরিশ্রম যদি দেখেন, চার-পাঁচ বছরের সাফল্য দেখেন, এতেই সব বোঝা যায়। সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাদের চিন্তাভাবনা হচ্ছে সামনের দিকে আরও কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।’ তাঁর সঙ্গে দাঁড়ানো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের সাফল্যের সবচেয়ে বড় কারিগর। শুরু থেকেই নারী ফুটবলের সঙ্গে থাকা ছোটনও বিরল সংবর্ধনায় মুগ্ধ, ‘রাজসিক এই আয়োজনে আমাদের বরণ করে নেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের এই পথচলা অনেক দিনের। অনেক পেছন থেকে আমরা উঠে এসেছি, ২০১২ সাল থেকে পরিবর্তনটা শুরু হয়েছিল। সবার অবদানেই আজকের এই সাফল্য।’
ছোটখাটো সংবাদ সম্মেলনের পর সবার অপেক্ষা ছাদ খোলা বাসে মেয়েদের উদযাপন। ১০ মিনিট পর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে প্রথমবার ছাদ খোলা বাসে চড়েন সানজিদারা। চার ঘণ্টার টানা জার্নি শেষে রাতে বাফুফে ভবনে এই মেয়েদের ফুলের স্টিক দিয়ে বরণ করে নেন ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
বিএসডি/এফএ