সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপদ পিছু ছাড়ছে না। তাঁর করবিবরণী তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
ট্রাম্প দ্রুত এক বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্টের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি তাঁর বিরুদ্ধে চলমান রাজনৈতিক ভূত খোঁজার আরেকটি চেষ্টামাত্র। সুপ্রিম কোর্টের এমন কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি আগের মতোই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি জয়ী হবেন।
২২ ফেব্রুয়ারি মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট নিউইয়র্কের তদন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে ট্রাম্পের করবিবরণী হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার সময় নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে এই বিবরণী হস্তান্তরের নির্দেশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। তখন ট্রাম্প তাঁর করবিবরণী প্রকাশ করতে বাধ্য নন বলে দাবি করছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাওয়া কিছু আইনি সুবিধা এখন ট্রাম্পের নেই। যদিও গতকাল সোমবারের দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার সঙ্গে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট থাকা বা না–থাকার কোনো আইনি বিষয় বিবেচ্য ছিল না।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা কোনো মন্তব্য না করেই ওই নির্দেশ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি সাইরাস ভ্যান্স বলেছেন, কাজ চলমান থাকবে। তিনি এ নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার সময়ই নিউইয়র্কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়া, কর ফাঁকির জন্য হিসাববিবরণীতে গরমিলসহ নানা অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে এ তদন্ত শুরু হয়।
ট্রাম্পের একসময়ের বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন আইনজীবী মাইকেল কোহেন। তাঁর মাধ্যমে দুজন নারীর মুখ বন্ধ করার জন্য নগদ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। আলোচিত এই দুই নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। মনে করা হচ্ছে, তাঁদের মুখ বন্ধ করার জন্য নগদ অর্থ প্রদানের প্রমাণ পাওয়া যাবে ট্রাম্পের হিসাববিবরণীতে। এ ছাড়া কর রেয়াত পাওয়ার জন্য হিসাবের খাতায় বড় ধরনের গরমিল পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টরা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা প্রমাণের জন্য নিজে থেকেই করবিবরণী প্রকাশ করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন ট্রাম্প।
নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরির মাধ্যমে ট্রাম্পের করবিবরণীর তথ্য তলব করা হয়েছিল। কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে মাধ্যমে ট্রাম্প তা বন্ধ করে আসছিলেন। প্রেসিডেন্টের করবিবরণী জনসমক্ষে আসার বাধ্যবাধকতা নেই বলে দাবি করে আসছিলেন ট্রাম্প। এ নিয়ে ক্ষমতায় থাকার সুযোগও গ্রহণ করছিলেন তিনি। কর আইনে কোনো কোনো বিবরণী প্রকাশের জন্য অর্থমন্ত্রীর (ট্রেজারি সেক্রেটারি) অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
সুপ্রিম কোর্টের গতকালের আদেশে এ ব্যাপারে ট্রাম্প একটা বড় ধাক্কা খেলেন। যদিও আদালত এই করবিবরণী জনগণের জন্য নয়, গ্র্যান্ড জুরির জন্য উন্মুক্ত করেছেন। কোনো অপরাধের অভিযোগ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশনাই যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে; যদিও এ নিয়ে ট্রাম্প আপিল করতে পারবেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশিত হলে গতকাল দুপুরে ট্রাম্প এ নিয়ে দীর্ঘ বিবৃতি দেন। ট্রাম্প বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক রাজনৈতিক ভূত খোঁজার মতো তদন্ত চালানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষ কাউন্সেলর রবার্ট মুলারের তদন্তের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, দুই দফা অভিশংসনের পরও তিনি নিরপরাধ হিসেবে অব্যাহতি পেয়েছেন।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর নাম উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, সবই হচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টির মদদে। সুপ্রিম কোর্টের কখনোই এমন কাজ হতে দেওয়া উচিত নয় বলে ট্রাম্প মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বিশ্বের মতো আইনকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে মন্তব্য করেন। এটি কোনো ন্যায়বিচার নয়, বরং স্বৈরাচারী আচরণ বলে মনে করেন ট্রাম্প। আদালতও তাঁর পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আগের মতোই লড়াই করে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। নির্বাচন নিয়ে তাঁর প্রতি যা হয়েছে, তা সত্ত্বেও তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন এবং জয়ী হবেন বলে উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করবিবরণী–সংক্রান্ত আরেকটি মামলা ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল কোর্টে চলমান রয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির আবেদনের পর ওয়াশিংটন ডিসির আদালত থেকে করবিবরণী চাওয়া হলে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন তা উপস্থাপনে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
বর্তমান জো বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেবে কি না, তা পরিষ্কার করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তাঁরা আইনের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। আইনের নির্দেশিত পথই অনুসরণ করবেন।