ডেস্ক রিপোর্ট
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা বর্তমানে একটি বহুল প্রচলিত মানসিক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন লোক এই ডিপ্রেশন ব্যাধিতে ভুগছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৪৪ ভাগই ডিপ্রেশনে ভুগছেন।
বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ঢাকায় পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, শিশু কিশোরদের ১৮ ভাগের বেশি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত।
ডিপ্রেশন কেন হয়?
এ বিষয়ে দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. তাজুল ইসলাম মেডিভয়েসকে বলেন, বাংলাদেশে ডিপ্রেশনজনিত সমস্যা, বিশেষত তরুণ সমাজের মাঝে ডিপ্রেশন সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ নানাবিধ সামাজিক ও পারিবরিক সমস্যা। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিভিন্নভাবে ডিপ্রেশনের রোগী বাড়াচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, একজনকে অন্যজনের সঙ্গে তুলনা করার একটি অভ্যাস আমাদের সমাজে রয়েছে, যা তরুণদের ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দেয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় জিপিএ-৫ পেতে হবে, ভালো গ্রেড পেতে হবে এমন একটি প্রবণতা রয়েছে। এটি আমাদের কোমলমতি শিশুদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে। ফলে শিশু ও কিশোরদের বিষণ্ণতা ভুগতে দেখা যায়। এমনকি জিপিএ-৫ না পাওয়ায় অত্মহত্যার ঘটনাও প্রায়শই শোনা যায়। এছাড়াও আমাদের চাকরি খাত অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক,
পড়াশোনা শেষ করার পর কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পাওয়া তরুণরা ডিপ্রেশনে ভুগে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মো. তাজুল ইসলামের বক্তব্য অবলম্বনে ডিপ্রেশনের লক্ষণ ও প্রতিকারের বিষয়ে তুলে ধরা হলো-
ডিপ্রেশনের লক্ষণ
বেশ কিছু লক্ষণ দুই সপ্তাহ বা তারও দীর্ঘ সময় দেখা দিলে একজন ব্যক্তি ডিপ্রেশনে ভুগছেন বলে ধরে নেওয়া যায়। যেমন:
ক. মন অশান্তিতে থাকা, মন খারাপ থাকা, মন মরা হয়ে থাকা।
খ. কোনো কিছুতে আনন্দ না পাওয়া, এক সময়ের প্রিয় কাজগুলোকেও নিরানন্দময় মনে হওয়া।
গ. কাজের ক্ষেত্রে অনীহা, সারাদিন শুয়ে বসে কাটিয়ে দিতে চাওয়া।
ঘ. পারিবারিক কাজ ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে অনীহা।
ঙ. সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করা, নিজেকে ছোট করে দেখা।
চ. ছোট কোনো বিষয়ের ব্যর্থতাকেও বড় করে দেখা।
ছ. নিজেকে অপরাধী মনে করা।
ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে মানসিক লক্ষণের পাশাপাশি বেশ কিছু আচরণগত ও শারীরিক লক্ষণও দেখা যায়। যেমন:
ক. ঘুম না হওয়া আবার অস্বাভাবিক বেশি ঘুম হওয়া।
খ. খাওয়া-দাওয়া কমে যাওয়া, আবার অস্বাভাবিক অনেক বেড়ে যাওয়া।
গ. একদম চুপচাপ হয়ে যাওয়া আবার কখনো উল্টোটা দেখা যায়, কথা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
প্রতিকারের উপায়
ডিপ্রেশনের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সান্তনা বা পরামর্শ দিয়ে এই রোগ ছাড়ানো যাবে না। আবস্থা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মত স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও সাইকো-থেরাপি, ফ্যামিলি কাউন্সিলিং ইত্যাদির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিএসডি/এমএম