নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়লেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সাম্প্রতিক এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এমন আশাব্যাঞ্জক তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়লেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। এছাড়াও গত দুই মাসে ডেলটা ধরনের সংক্রমণের হারের তুলনায় পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্থিতিশীল।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক খবরে জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে ২২ আগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনায় নতুন করে ৪৫ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় একই রকম ছিল। দুই মাসের পর্যালোচনার ভিত্তিতে করোনা সংক্রমিতের হার স্থিতিশীল রয়েছে।
আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনার মৃত্যুর হার একই রকম থাকলেও ডব্লিউএইচও বলছে, ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়াসুস জানান, করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল রয়েছে। যেকোনো জায়গায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকলেই সব জায়গার জন্য এটি হুমকি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। আগের সপ্তাহের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ বেড়েছে ১৫ শতাংশ। দেশটিতে করোনায় গত এক সপ্তাহে ৬ হাজার ৭১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুহার আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাজ্যেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তবে এ জন্য বিধিনিষেধ তুলে দেওয়াকে কারণ বলে মনে করছে ডব্লিউএইচও। তাদের হিসাবে, এক সপ্তাহে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে ১১ শতাংশ। ভারত, ইরান ও ব্রাজিলে গত সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার কমেছে।
তবে জাপানে গত সপ্তাহের তুলনায় করোনার সংক্রমণ ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশ যেমন মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুও বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, করোনা মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২১ কোটি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আর করোনার মারা গেছেন ৪৪ লাখের বেশি মানুষ।
সংস্থাটির হিসাবে, গত মে মাসে বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা স্থিতিশীল ছিল। তবে ডেলটা ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরে গত দুই মাসে অনেক দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়।
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রে গত সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ বাড়লেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ কমেছে। অন্যান্য অঞ্চলে সংক্রমণ স্থিতিশীল রয়েছে। বাংলাদেশেও ডেলটার ব্যাপক সংক্রমণের পরে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ দিন পর বুধবার (২৫ আগস্ট) দেশে রোগী শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের নিচে নেমেছে। সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুও কমছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। এর চেয়ে কম ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল গত ২৯ জুন।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে। সতর্কতার সঙ্গে বিধিনিষেধ শিথিল করার ওপর জোর দিয়েছে ডব্লিউএইচও। সেই সঙ্গে ডেলটা ধরনের সংক্রমণরোধে টিকাদান কর্মসূচি সম্প্রসারিত করার ওপর জোর দিয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় মারা গেছেন আরও ১১ হাজার ১৭৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ১৬ হাজার ৫৭০ জন।
এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪২১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৯ হাজার ২৭৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৪৮১ জন।
বিএসডি/এমএম