নিজস্ব প্রতিবেদক
ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের (আইটিএস) এর আওতায় আসছে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’ (এন-৮)। এই ব্যবস্থায় এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায়, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একক উৎসভিত্তিক পরামর্শক হিসেবে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিকে (কেওআইসি) নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এজন্য ৫ বছরের সার্ভিস চার্জ বাবদ প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন ‘ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনসহ ৪-লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প’ এর আওতায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, যার দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। এতে ৩টি সেতু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে-৮৪৭.৩২ মিটার দীর্ঘ বুড়িগঙ্গা সেতু (চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু), ৮৫৩.২০ মিটার দীর্ঘ ১ম ও ২য় ধলেশ্বরী সেতু এবং ৪৫০.০০ মিটার দীর্ঘ আড়িয়াল খাঁ সেতু।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ‘ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁচ্চর-ভাঙ্গা অংশ ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেনসহ ৪-লেনে উন্নয়ন প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প’ এর আওতায় ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে-এর কাজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেড এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অনুমোদিত ডিপিপি অনুযায়ী ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়েতে (পদ্মা সেতু ছাড়া) টোল আদায়ের জন্য অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড টোল প্লাজা নির্মাণ কাজ চলমান আছে।
সূত্র জানায়, ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা (এন-৮)’ এক্সপ্রেসওয়ে কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো বিশেষ করে ফরিদপুর, বরিশাল ও খুলনা এলাকার এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন এবং নির্বিঘ্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হবে, যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিবর্তন বয়ে আনবে।
এছাড়া, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই এক্সপ্রেসওয়েতে চলমান ট্রাফিক জ্যামিতিক হারে বাড়বে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা (এন-৮)’ এক্সপ্রেসওয়েতে কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কেওআইসিএ) আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ‘আইটিএস (ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম) প্রবর্তন করে বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়ক করিডোরগুলো নির্ভরযোগ্যতা এবং সুরক্ষা বাড়ানো’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) কর্তৃক আইটিএস স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় কার্যক্রম ও দেশের প্রথম আইটিএস কার্যক্রম পরিচালনা এবং এক্সপ্রেসওয়েটির অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যথোপযুক্ত সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগের কার্যক্রম নেওয়া প্রয়োজন।
ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম একটি টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাপনায় রিয়েল-টাইম, ট্রাফিক এবং ভ্রমণের তথ্য নিয়ন্ত্রিত থাকে। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বিধায় এতে যানজট বহুলাংশে কমে যাবে এবং এতে পণ্য ও মালবাহী যানবাহনের দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো নিশ্চিত হবে। একটি প্রাণবন্ত অর্থনীতির জন্য আইটিএস কার্যক্রম পরিচালনা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এই কার্যক্রম বিশেষায়িত এবং বাংলাদেশে প্রথম। আইটিএস কার্যক্রম পরিচালনার মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে নেই। এছাড়া যে ৩টি সেতুতে বর্তমানে টোল আদায় করা হচ্ছে আইটিএস স্থাপিত হলে সেতু ৩টিতে আলাদাভাবে টোল আদায়ের পরিবর্তে এক জায়গা থেকে সমন্বিতভাবে টোল আদায় করা হবে।
জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪১১২ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে (হাইওয়ে সড়ক) রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। কেইসি এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও ৪৫০৮টি সেতু রক্ষণাবেক্ষণ করছে, যার মোট দৈর্ঘ্য ১৩৩২ কিলোমিটার। প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি সিস্টেম (আইটিএস) অনুসরণ করছে। টোল আদায়ে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসিএস) ব্যবহার করছে। কেইসি এ বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিধায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে এই কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য কেইসিকে নিয়োগ দেওয়া হলে বিশেষায়িত এই কাজগুলো পদ্মা সেতুর সঙ্গে সমন্বিতভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কেইসিকে নিয়োগ করা যৌক্তিক হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে বা বিপর্যয়কর কোন ঘটনা মোকাবিলার জন্য, জনস্বার্থে, সরকার কর্তৃক গঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশক্রমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা অন্য কোন ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয় কার্য সম্পন্ন করতে পারবে মর্মে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এর বিধি ৬৮ (১) এ উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া, পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ১০৪ এর (ঘ) (২) (ই) অনুযায়ী যেকোনো মূল্যসীমার সেবা কাজের জন্য একক উৎস ভিত্তিক পরামর্শক (ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান) নিয়োগের বিধান রয়েছে।
এছাড়াও পদ্মা বহুমুখী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের লক্ষ্যে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনকে নিয়োগের জন্য সেতু বিভাগের আওতাধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা (এন-৮)’ এক্সপ্রেসওয়েটি পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি সমন্বিত অংশ এবং বর্ণিত সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েটি একই করিডোরে অবস্থিত হওয়ায় এক্সপ্রেসওয়েটির রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায় আইটিএস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সিকে (কেওআইসি) নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিএসডি/এমএম