নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল এর বিশ্ব জনসংখ্যা চিত্র (২০২১) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৭.৫% ভাগ (৪ কোটি ৫৪ লক্ষ) হলো কিশোর ও তরুণ (১০-২৪)। অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের গ্লোবাল স্কুল বেইজড স্টুডেন্ট হেলথ সার্ভে (জিএসএসএইচ) অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৩-১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯.৮ শতাংশ এবং ১৬-১৭ বছর বয়সী তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ শতাংশ বা প্রায় ৭২ লক্ষ ৬৪ হাজার জন। সুতরাং দেশের এক চতুর্থাংশ এই যুব সম্পদকে তামাকের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন।
এ লক্ষ্যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমন্টে অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পূওর (ডরপ) এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুবিনা ইসলামের সঞ্চালনায় গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার (২২ ও ২৪ অক্টোবর, ২০২২) ডরপ এর প্রধান কার্যালয়ে ৬৫ জন তরুণদের নিয়ে “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়া ও যুব সমাজের করণীয়” বিষয়ক একটি আলোচনা সভা পরিচালনা করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকলকে ডরপ এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়ার বিষয়ে অবহিত করা হয় এবং এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ক্যামপেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর গ্রান্টস ম্যানেজার জনাব আব্দুস সালাম মিঞা বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুবদের বিশেষ গুরুত্ব দেন বলেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে খসড়া প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে এবং জনমত যাচাইয়ের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, এই খসড়া প্রস্তাবনীর পক্ষে ১৫৫ জন মাননীয় সংসদ সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসার কল্যাণ সমিতির সদস্যগণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক মণ্ডলী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, স্কুল, কলেজ এবং মাদরাসার শিক্ষক মণ্ডলী ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, ইমাম, পুরোহিত, চিকিৎসক, গবেষক, বিভিন্ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন, সন্ধানী ব্লাড ব্যাংক এবং গাড়ি চালক এ্যসোসিয়েশনসহ প্রায় ২০ হাজার জনমত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর জমা পড়েছে। সুতরাং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়া চুড়ান্ত হওয়া এখন সময়ের দাবি।
খসড়া প্রস্তাবনাগুলো মূল সংশোধনীতে যুক্ত হলে তা কিশোর-তরুণ ও যুবদের মাঝে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে যাবে।” সভাপতির বক্তব্যে ডরপ এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান বলেন, “ডরপ কর্তৃক উপস্থাপিত আলোচ্য বিষয়গুলো আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তরুণদের অধপতনের শুরুটা হয় ধূমপান দিয়ে। অথচ একটা জাতিকে নেতৃত্ব দেয় এই তরুণরাই।
সুতরাং কিশোর ও তরুণদের সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্য থেকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়া বিশেষ করে ‘ই-সিগারেট উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, সংরক্ষণ, বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রচারণা, প্রণোদনা, পৃষ্ঠপোষকতা, বিপণন, বিতরণ, ক্রয়-বিক্রয়, ও পরিবহন করার বিধি-নিষেধ’ এবং ‘ক্রেতার নিকট বিক্রয়ের সময় ব্যতীত বিক্রয়স্থলে সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্য বা এর মোড়ক বা প্যাকেট দৃষ্টির আড়ালে রাখার বিধি-নিষেধ’ প্রশংসার দাবি রাখে।
” তিনি আরও বলেন, “সিগারেটের খুচরা বা খোলা বিক্রি নিষিদ্ধ করলে কিশোর-তরুণরা তাদের পকেট খরচের টাকা বাঁচিয়ে পুরো প্যাকেট সিগারেট কিনতে সক্ষম হবে না। ফলে যে সব তরুণ সিগারেট খাওয়া শুরু করেনি তাদের শুরু করার হার কমবে পুরো প্যাকেটের দাম বেশি থাকায়। আর যেসব তরুণ আগে থেকেই সিগারেটে আসক্ত হয়ে গেছে তাদের খাওয়ার হার কমে যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ।
আমরা আশা রাখি অতি দ্রুতই এই খসড়াটি চুড়ান্ত রূপ লাভ করবে।” এছাড়া ডরপ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী যুব সদস্যবৃন্দ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত খসড়া দ্রুত চুড়ান্ত করার দাবি জানান এবং অলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে তাদের ক্যাম্পাস, পাড়া-মহল্লা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাক্টিভিজম করার অঙ্গীকার করেন।
বিএসডি/এফএ