নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বিদ্রোহী নেতা ও বিএনপি ‘পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা’ কামরুল হাসান নাসিম বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যেই দলীয় বিপ্লব করা হবে। নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনেই বসবে প্রতীকী উচ্চ আদালত।
কোনো একটি সকালে আমি তা করে দেখাবো। অতঃপর, দলের কাউন্সিল করা হবে। গেল ২০ বছরের মধ্যে বেঁচে থাকা সব কাউন্সিলরদের ভোটে শীর্ষ নেতাকে বাছাই করা হবে।
আরও পড়ুন- কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার ঘোষণা প্রতারণা : বিএনপি
রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে ভার্চ্যুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি এ বছরের রাজনৈতিক সূচি জানিয়ে এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে নাসিম বলেন, আপনারা অবগত যে, ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি দলের পক্ষ থেকে রাজধানীর লেক শোর নামক একটা ভেন্যু (হোটেল) থেকে বিএনপি পুনর্গঠনের তাগিদ রাখি। সেদিন বলা হয়েছিল, ১৯৭৮ সালে গঠিত বিএনপি, শহীদ জিয়ার গড়া দল। জিয়াউর রহমান, মশিউর রহমান যাদু মিয়াদের নিয়ে যে দল গঠন করেছিলেন তা আজ দুর্বল, মানহীন ও উত্তরসূরীদের কাছে নিরাপদ নয়। ফলত দলটি জাতীয়তাবাদী হিসেবে মেলে ধরতে পারছে না। কাজেই দলকে পুনর্গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, দলীয় বিপ্লব করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যেই হবে। অর্থাৎ এই বছরের আগস্ট মাস থেকে ডিসেম্বর ২০২১ এর মধ্যে দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনেই বসবে প্রতীকী উচ্চ আদালত।
নাসিম বলেন, আমি তারেক রহমানকে সময় বেঁধে দিয়ে বলেছিলাম যে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপনি আমাকে পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা হিসেবে মেনে নিয়ে বলুন, কামরুল হাসান নাসিম এগিয়ে যাও। কিন্তু আপনি তা করে দেখানোর সাহস দেখাননি। তাই আপনাকে বলছি, চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বরে জাতীয়তাবাদের ওপর, বিএনপির ওপর এমন একটি বিশ্বমানের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে জাতিকে দেখিয়ে দেবো, আপনারা কীভাবে এই দলের সঙ্গে এক মিনিট থাকতে পারেন! থাকতে পারবেন না! ‘মম অব দ্য ডন’- শীর্ষক চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করে বসে আছি। তার মনে রাখা উচিত ছিল, কামরুল হাসান নাসিম তো নেতা হতে চায় না। তিনি সংকটকালীন মুখপাত্র হয়ে দলকে সাজিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বুদ্ধি বৃত্তিক চ্যালেঞ্জ করবার কার্যত এই দেশের একমাত্র নেতৃস্থানীয় চরিত্র।
বিএনপির ৫টি অসুখ সারানোর জন্য উদ্যোগে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নাসিম বলেন, আমরা স্বাধীনতা বিরুদ্ধ শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের নামে জট থেকে বাদ দেবো। আমরা অতি মাত্রায় বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করানোর জন্য কাজ করছি ও করবো। জনস্বার্থ সংরক্ষণে রাজনীতি করব। আমরা আমাদের বিশেষত স্বেচ্ছাসেবক দলকে সামনে রেখে সারা দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসকের কাছে রোগীদের পৌঁছানো এবং আর্থিক সহযোগিতায় চলে যাবো। আপাততভাবে, এটাই জনস্বার্থের রাজনীতি। রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রণোদনা দেওয়া হোক, এই মর্মে আমরা আন্দোলন করবো। এতে করে দেশের নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত জনশ্রেণী বেঁচে যাবে। আমরাই কেবল নয় সরকার দলসহ প্রত্যেকটি নিবন্ধিত সংগঠনকে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে সরকারকে।
তিনি বলেন, বাঁকা রাস্তায় ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে। নাশকতা করে নয়, মূলধারার রাজনীতি করেই আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবে। বুর্জোয়া শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে বিএনপি রাজনীতি করবে না, তেমন শিক্ষায় প্রজন্মকে প্রস্তুত করা হবে। খালেদা জিয়া-তারেক রহমান রাজনীতি করুন কিন্তু পদ পদবী নিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে আর নয়। আপনাদের দুইজনাকে দলের নীতি নির্ধারণ থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা হবে। তারেক রহমানপত্নী ডাক্তার জোবায়দা রহমান দলের প্রাথমিক সদস্য হয়ে অর্ধযুগ রাজনীতি করুন। দেশে ফিরুক তিনি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অভিজ্ঞতা নিতে তাদের দুজনকে উপদেষ্টা করা হবে। কিন্তু, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শীর্ষ নেতৃত্বের পুনর্গঠন করাটাই দলীয় বিপ্লবের আসল মাহাত্ম বলে মনে করার সুযোগ আছে। দলের চেয়ারপারসন হিসেবে আসন্ন কাউন্সিলে জাফরউল্লাহ চৌধুরী, মাহফুজ আনাম, ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেনদেরকে প্রস্তাব দিয়ে কিংবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নন্দিত নাম হিসেবে দেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত করার উদ্যোগে যাওয়া হবে। একইসঙ্গে মহাসচিব হিসেবে আব্দুল আওয়াল মিন্টু, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু কিংবা রুহুল কবীর রিজভীদের মধ্যে থেকে কেউ হলে মন্দ হবে না। তবে, কাউন্সিলরদের ভোটেই বিএনপির শীর্ষ পদে পুনর্গঠন করা হবে।
বিএসডি/এমএম