ক্যাম্পাস প্রতিনিধি:
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় হলসমূহ বন্ধ, সশরীরে পরীক্ষার আয়োজন বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর উপাচার্য ও তেজগাঁও পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন তারা।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে পাঁচ দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তখন দাবি না মানায় এবং উল্টো করোনা যার হবে, দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে- বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের এমন বক্তব্যের পরই রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টায় তেজগাঁও মূল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাসে ফেরেন আন্দোলনকারীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, আজ শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন শিক্ষার্থীরা। তখন শিক্ষার্থীদের দাবি উড়িয়ে দেন উপাচার্য। পাশাপাশি বুটেক্স রেজিস্ট্রার শাহ আলিমুজ্জামান বেলাল শিক্ষার্থীদের বলেন, করোনা যার যার, দায়ভার তার। রেজিস্ট্রারের ওই বক্তব্যের পরই সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আবাসিক শিক্ষার্থীসহ মেসগুলোয় অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। কেননা হলসমূহে আমরা অনেক গাদাগাদি করে একই রুমে অবস্থান করি। যার কারণে হলসমূহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব নয়।
আবার মন্ত্রিপরিষদ থেকে বলা হয়েছে, ১২ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষার্থীরা ১ ডোজ ভ্যাকসিন ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারবে না এবং টিকা-কার্ড ছাড়া যানবাহনে উঠতে পারবে না। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী এক ডোজ ভ্যাকসিন এখনো পায়নি। অনেকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য আবেদন করেও ও এসএমএস পায়নি।
অন্যদিকে করোনার কারণে সংক্রমণের হার ইতোমধ্যে পাঁচ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শিগগিরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আর সেশনজট বাড়াতে চাই না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা দ্রুত অফলাইনে বিকল্প পদ্ধতিতে পরীক্ষাগুলো দিতে চাই। সংক্রমণ বেড়ে গেলে প্রয়োজনে হল বন্ধ করেও যথাসময়ে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চাই। এ অবস্থায় প্রশাসন ১১ জানুয়ারি থেকে পরীক্ষার আয়োজন করেছে। তাই আমরা পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছি।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো;
১. অবিলম্বে হলসমূহে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে হল বন্ধ করতে হবে।
২. অবিলম্বে অফলাইনের বিকল্প পদ্ধতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩ দিন থেকে সর্বোচ্চ ১ সপ্তাহ সময় নিয়ে নতুন রুটিনে অফলাইনে বিকল্প পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিতে পারে, অথবা বর্তমান রুটিনের প্রথম ২টি পরীক্ষা পিছিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো পূর্বের রুটিন অনুযায়ী নিতে পারে।
৩. করোনাকালীন সময়ে চলমান টার্ম পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে, অবশ্যই চলমান টার্মের পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যেই আগামী টার্মের ক্লাস অনলাইনে শুরু করতে হবে এবং দিনপ্রতি অন্তত ৪টি এবং সর্বোচ্চ ৬টি ক্লাস নিতে হবে।
৪. করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলে এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বিলম্ব হওয়ার কারণে যদি কোনো শিক্ষার্থী হলে আক্রান্ত বা সংক্রমিত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে, তার এবং তার পরিবারের সার্বিক দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে।
৫. দাবিগুলো আমলে নিয়ে আজকের মধ্যেই মৌখিক স্বীকৃতি এবং আগামী ৩ দিনের মধ্যে প্রশাসনকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নোটিশ আকারে প্রকাশ করতে হবে। তা-নাহলে সশরীরে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে যেকোনো শিক্ষা-কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন শিক্ষার্থীরা।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, দীর্ঘ সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। আমরা অনুরোধ করেছি, ভিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা অনুরোধ করেছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়েছে। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি ও আন্দোলনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে টেক্সটাইল বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, আমি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। মৌখিকভাবে বলেছি, ১১ জানুয়ারির পরীক্ষা স্থগিত, হলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে, যাতে তারা আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে। আর পরবর্তীতে পরীক্ষা অফলাইনে নাকি অনলাইনে হবে সেটি নিয়ে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাব। সে জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সময় চেয়েছি।
বিএসডি/ এলএল