নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিবর্তনের সুযোগ সকলকে নিতে হবে। এই দেশটা কারও একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম… সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল সত্যিকার অর্থেই একটা অসাম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ নির্মাণ করবো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
আজ (বুধবার) ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনে সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপে যান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমার দলের পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই শারদীয় দুর্গাপূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করুক, সত্যিকার অর্থেই একটা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক… এই কামনা করছি, এই প্রত্যাশা করছি।
তিনি বলেন, আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সাথে আরেক বর্ণের কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনো রাজনীতি থাকবে না।
‘হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আছে বিএনপি’
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন সেটি আমরা বিবেচনা করছি। এর যে মূল বিষয়টি সেটার প্রতি আমাদের সর্বাত্মক যে সহানুভূতি রয়েছে। আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকব।
তিনি আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি রাজনৈতিক দল, আমি নাম বলতে চাই না। তারা বরাবরই বলে তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণ কর্তা। কিন্তু আপনারা যদি অতীতে ঘটনাগুলো দেখেন, তাদের নেতৃত্বে কিন্তু তাদের লোকেরাই সেখানে ছিল। আপনাদের সম্প্রদায়ের মানুষের যত জমিজমা, সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হয়েছে তার মূলেও তারা ছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা আমাদের সরকার নয়, এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের সরকার এলে প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করবোই।
৮ দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, আমাদের ওপর যেসব অন্যায়, নির্যাতন হয়েছে তার ন্যায় বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আশা করি আপনি (মির্জা ফখরুল) আমাদের সাথে থাকবেন, আপনার দল থাকবে। কেন আশা করি? ৫ আগস্টের পরেও আপনার দলের নেতা-কর্মীরা আমাদের মন্দির পাহারায় ছিলেন, বাড়িঘর পাহারায় ছিলেন। সেজন্য আজকের দিনে কৃতজ্ঞা জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আপনার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং আপনার নির্দেশে সারা বাংলাদেশে পূজা কমিটির টিমের সাথে আপনাদের (বিএনপির) নেতৃবৃন্দ সাংগঠনিকভাবে আলাপ-আলোচনা করেছেন। পূজায় নিরাপত্তার কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। তবে, প্রত্যাশা করি, আমাদের ৮ দফা এবং ন্যায় বিচারের দাবির সাথে পাশে থাকবেন ও একাত্মতা ঘোষণা করবেন।
মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব দুর্গাপূজার প্রথম দিনে ষষ্ঠীতে ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপে আসার জন্য বিএনপি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
‘বিদেশি কিছু গণমাধ্যমের অপপ্রচার’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ এই বিশাল পরিবর্তনের ফলে সারা দেশের মানুষ যখন আনন্দিত হয়েছে, পরিবর্তনের একটা আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, আশা তৈরি হয়েছে সেই সময়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদেশি কিছু মিডিয়া, কিছু প্রচার মাধ্যম, তারা বাংলাদেশে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে, যা একেবারেই সত্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনা ঘটেনি সেকথা আমি বলব না। কিছু ঘটনা ঘটেছে, তা কোনো সম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল না, তা ছিল রাজনৈতিক ঘটনা।
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম-লড়াই করেছি। এতে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছেন, অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, মিথ্যা মামলার বেড়াজালে অনেকেই এখন পর্যন্ত আটক আছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান।