নিজস্ব প্রতিবেদক:
তেল সরবরাহ ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ ইন্দোনেশিয়া। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ করেই পাম তেলের বুকিং দর বেড়েছে; এর প্রভাব পড়েছে দেশের ভোজ্য তেলের বাজারেও। যদিও বাড়তি দরের এই তেল দেশে এসে কারখানায় পরিশোধন শেষে বাজারে আসতে অন্তত তিন মাস লাগবে। ইন্দোনেশিয়া এমন এক সময়ে সরবরাহ কমিয়েছে, যখন সয়াবিন তেল নিয়ে বাংলাদেশে নৈরাজ্য চলছে।
ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর আবদার করেছেন; আর সরকার এখনই আর দাম বাড়াতে চাইছে না। কাঙ্ক্ষিত দাবি পূরণ না হওয়ায় মালিকরা তেল সরবরাহ কমিয়েছে; সেটি ঠেকাতে কারখানার গেটে অভিযান না চালিয়ে সরকার বাজারে অভিযান চালাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে মোট পাম তেল আমদানির ৮৫ শতাংশের বেশি আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে; বাকিটা মালয়েশিয়া থেকে। আগে সবচেয়ে বেশি মালয়েশিয়া থেকে এলেও কয়েক বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ার দিকে ঝুঁকেছেন ভোজ্য তেল পরিশোধন ব্যবসায়ীরা। ইন্দোনেশিয়া তাদের নিজেদের মজুদ বাড়িয়ে বাড়তি দাম লুফে নিতেই মূলত রপ্তানি ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশে ভোজ্য তেল আমদানির বড় অংশজুড়ে আছে পাম তেল; সয়াবিন ব্যবহৃত হয় প্রধানত গৃহস্থালি রান্নায়। রেস্টুরেন্ট, বেকারি শিল্প, প্রসাধন শিল্প এবং বড় অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা পাম তেলের।
জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভ্যাট প্রত্যাহার করায় সয়াবিনের বাজারে অস্থিরতা কমার যে আশা করেছিলাম, সেটি শেষপর্যন্ত কতটুকু সুফল দেবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ এরই মধ্যে পাম তেলের বুকিং অনেক বেড়ে গেছে। ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি কমালেও এর প্রভাব কিন্তু মালয়েশিয়াতে পড়েছে। আর এই দুই দেশের বাইরে আমদানির তো কোনো সুযোগ নেই। ফলে নতুন করে শঙ্কা বেড়েছে। ’
পাম তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় দেশের বাজারে কেমন প্রভাব পড়বে—সেটি জানতে টিকে গ্রুপের পরিচালক মোস্তফা হায়দার, সিটি গ্রুপ এবং এস আলম গ্রুপের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মালয়েশিয়া পাম অয়েল কাউন্সিলের হিসাবে, গত ৯ মার্চ ক্রুড পাম তেল সাত হাজার ৭৪ মালয়েশিয়ান রিংগিতে বিক্রি হয়েছে; ৮ মার্চ ছিল ছয় হাজার ৪১৬ রিংগিত; ৭ মার্চ ছিল ছয় হাজার ৬২৬ রিংগিত; ছয় হাজার ২৭৬ রিংগিত। ১০ মার্চ সেটি আরো বাড়বে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, গতকাল খাতুনগঞ্জে এস আলমের পাম তেল বিক্রি হয়েছে মনপ্রতি পাঁচ হাজার ২৫০ টাকা; এক সপ্তাহ আগে ছিল পাঁচ হাজার ৮৫০ টাকা। সিটি পাম বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার ২৭০ টাকা; এক সপ্তাহ আগে ছিল ছয় হাজার টাকা। এস আলমের সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ছয় হাজার ৮০ টাকা; সিটি সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ছয় হাজার ১০০ টাকা। গত সপ্তাহের তুলনায় সয়াবিন মণে ২০০ টাকা কমেছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার সরবরাহ কমার প্রভাব পড়েনি বাজারে।
মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিলের তথ্য মতে, দেশে ২০২১ সালে যত পাম তেল আমদানি করা হয়েছে, তার ৯২ শতাংশই করা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকি ৮ শতাংশ আমদানি করা হয়েছে মালয়েশিয়া থেকে। সেই বছর দেশে মোট পাম তেল আমদানি করা হয়েছে ১৩ লাখ ৮৮ হাজার টন।
বিএসডি/ এলএল