ক্রীড়া ডেস্ক:
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দশ উইকেটে পরাজয়ের পরে মিডিয়াতে নিন্দনীয় আক্রমণের শিকার হলেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ শামি। ভারতের ডানহাতি এই পেসারকে এরই মধ্যে ‘দেশদ্রোহী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আক্রমণকারীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে শামির ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে এরই মধ্যে বিষয়টির তোপ শুরু হয়েছে। যা দেখে দেশটির সাবেক ও বর্তমান অনেক ক্রিকেটারই সরব হয়েছেন। শচীন টেন্ডুলকার থেকে বীরেন্দ্র শেবাগসহ অনেকেই এখন মোহম্মদ শামির পাশে দাঁড়িয়ে আক্রমণকারীদের দিকে তির্যক দৃষ্টি দিয়েছেন। এমনকি রাজনৈতিক মহলেও এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে কারণে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও পাশে দাঁড়িয়েছেন শামির।
টুইট বার্তায় রাহুল লিখেছেন, মোহাম্মদ শামি, আমরা সকলে তোমার পাশে আছি। এদের জীবনটাই ঘৃণায় ভরে গিয়েছে, কারণ ওদের কেউ ভালবাসে না। ওদের তুমি ক্ষমা করে দাও। এমনকি প্রতিবাদ করেছেন ওমর আবদুল্লাও। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এগারো জনের একটি দল হেরেছে। তা হলে মাত্র এক জনকে নিশানা করা হচ্ছে কেন?
যদিও পরবর্তীকালে শামির পাশে দাঁড়িয়ে অনেক ক্রিকেট ভক্তও পাল্টা টুইট করতে শুরু করেছেন। যেখানে ঘৃণা নয়, বরং রয়েছে শামির প্রতি ভালবাসাই।
শচীন টেন্ডুলকার টুইট বার্তায় লিখেছেন, আমরা যখন টিম ইন্ডিয়াকে সমর্থন করি, তখন টিম ইন্ডিয়ার প্রত্যেক সদস্যকে সমর্থন করি। মোহাম্মদ শামি একজন বিশ্বমানের বোলার। ওর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্নই ওঠে না। আর যে কোনো ক্রীড়াবিদের মতো ওরও একটা খারাপ দিন যেতে পারে। আমি শামি এবং টিম ইন্ডিয়ার পাশে আছি।
রবিবার (২৪ অক্টোবর) দুবাইয়ে ইতিহাস গড়ে ভারতকে দশ উইকেটে উড়িয়ে দেয় পাকিস্তান। বিশ্বকাপে এবারই প্রথম তারা ভারতকে হারাল। যদিও ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিরাট কোহলিও স্বীকার করে যান, পাকিস্তান আমাদের সব বিভাগেই পুরোপুরি টেক্কা দিয়ে জিতেছে।
মূলত এরপরই শামিকে ভক্তদের একাংশের নিশানা করা নিয়ে অনেকেই পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দ্র শেবাগ ও পেসার ইরফান পাঠান এরই মধ্যে এই মুসলিম পেসারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শেবাগ টুইট করে জানিয়েছেন, মোহাম্মদ শামির প্রতি এ ধরনের বিদ্রূপ আমাকে অবাক করেছে। আপনারা কি ভুলে গেলেন, দেশকে ও ঠিক কত সম্মান এনে দিয়েছে? ভারতীয় দলের টুপি ও জার্সি কেউ একবার নিজের শরীরে জড়ালে সে দেশকে আর কখনো অসম্মান করতে পারে না। মনে-প্রাণে সে চাইবে দেশকে জেতাতে। পরের ম্যাচে দেখিয়ে দাও তুমি কী করতে পারো শামি। আমরা তোমার পাশে আছি।
এ দিকে ইরফান পাঠান টুইট বার্তায় লিখেছেন, ম্যাচে হার-জিত থাকবেই। তাই বলে কোনো একজনকে দোষারোপ করাটা আদৌ কি ভদ্রতা? আমরা কি পিছিয়ে যাচ্ছি? আমিও অনেক ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভাল খেলতে পারিনি, হেরেছি। তাই বলে কখনো শুনতে হয়নি সে দেশে চলে যেতে। গণমাধ্যমে এটা কী শুরু হলো?
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাক-ভারত ম্যাচে মাঠে দুদেশের ক্রিকেটারদের সৌহার্দের ছবি দেখা গিয়েছিল রবিবারেই। বিরাট কোহলির পাক অধিনায়ক বাবর আজমকে আলিঙ্গন এবং মহম্মদ রিজওয়ানকে স্নেহশীলভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার ছবি বিশ্বের ক্রীড়া মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। যদিও সোমবারেই সেই সৌহার্দের ছবি কিছুটা হলেও ফিকে করে দিয়েছে শামির প্রতি তার দেশের ক্রিকেট ভক্তদের একাংশের এই আক্রমণ।
বিএসডি/এসএসএ