নিজস্ব প্রতিবেদক
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মূল্যায়ন করতে হবে। নির্বাচন এপ্রিল কিংবা ফেব্রুয়ারিতে যখনই হোক জামায়াতে ইসলামী প্রস্তুত রয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা নতুনভাবে, নতুনরূপে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা-৭ আসনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ পূর্বক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, অতীতে গড়ে ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সরকার গঠন করেছে। অথচ ৭০ শতাংশ ভোটার ঐ সরকারকে ভোট দেয়নি। বৃহৎ ভোটের প্রদত্ত ভোটের কোনো মূল্যায়ন হয়নি। তাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সব নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন হবে। এজন্য পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিকল্প কোনো নির্বাচন নেই। তাই পিআর পদ্ধতির একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, নতুন বাংলাদেশে আর কোন ফ্যাসিবাদের উত্থান জনগণ মেনে নেবে না। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে জামায়াতের কি ভূমিকা তা জামায়াত জাতির সামনে উপস্থাপন করেনি, ক্রেডিট নেয়নি। কারণ জামায়াত এই গণঅভ্যুত্থানকে দলীয়ভাবে রূপ দিতে চায় না। আমরা মনে করি এই গণঅভ্যুত্থান ছাত্র-জনতার।
তিনি বলেন, জামায়াত কেন্দ্রীয়ভাবে ১৮ জুলাই প্রেস কনফারেন্স করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে দেশবাসীকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। আমরা ছাত্রদের নিরাপদ আবাসন, খাবারসহ সার্বিক সহযোগিতা করেছি। আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য আমরা ১০টি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সহায়তা করেছি। জামায়াত আমিরের পক্ষ থেকে ৫ আগস্ট বিকেলেই দেশবাসীকে ধৈর্য ধারণের পাশাপাশি শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমিরে জামায়াতের নির্দেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সারা দেশের আলেম-ওলামা জনগণের পাহারাদারের ভূমিকা রেখেছেন। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ স্বীকার করেছেন বিগত ৫৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শান্তিতে ও নিরাপদে ২০২৪ সালে তারা দুর্গা পূজা উদযাপন করতে পেরেছে।
বুলবুল জামায়াতে ইসলামীর প্রতি জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ জীবন দিয়েছে তবুও দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে সমর্থন দেয়নি দাবি করে বলেন, আপসহীনভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছে। ভারতীয় আধিপত্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামী বদ্ধপরিকর।
প্রবাসীরাই দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, অথচ প্রবাসীদের ভোটাধিকারের কোনো সুযোগ নাই। তাই তিনি, প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যায় দুই সহস্রাধিক বেসামরিক জনগণকে হত্যা করা হয়েছে। ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় হাসিনা যেই ষড়যন্ত্র করেছে, সেই ষড়যন্ত্র ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে নস্যাৎ করে দিয়েছে। বিক্ষোভের মুখে হাসিনা লেজ গুটিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা প্রশাসনে বহালতবিয়তে বসে আছে। গণহত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করে এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। তবেই শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠবে।
ঢাকা-৭ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক হাফেজ হাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় জন্ম নিবন্ধন ছাড়া এতিম শিশুদের ভর্তি করা হয় না, এতিম শিশুদের দায়িত্ব নেওয়া হয় না। যা চরম অন্যায়, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা। এতিমদের কেউ না থাকায় সে এতিম। সুতরাং এতিম শিশুদের সার্বিক দায়িত্ব এতিমখানাকেই নিতে হবে। তিনি আগামীতে সুযোগ পেলে এই এতিমখানার সার্বিক সংস্কার এবং অব্যবস্থাপনা দূর করে এতিমদের কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, নতুন বাংলাদেশে ঢাকা-৭ আসন হবে উন্নয়নের রোল মডেল।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা -৭ আসনের নির্বাচন পরিচালক আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা -৭ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. শামীমুল বারীসহ চকবাজার, বংশাল ও কোতোয়ালী থানা আমির, সেক্রেটারি ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।