বাগেরহাট প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে চার দিন ধরে মাঝারি বৃষ্টি ও দমকা বাতাস চলছে উপকূলীয় শরণখোলায়। সূর্যের দেখা নেই তিন দিন ধরে। বৃষ্টি আর দমকা বাতাস যেনো পাকা ধানে মই দিয়ে গেছে আমনের মাঠে। হাজার হাজার বিঘা কাচা-পাকা আমন ধান শুয়ে পড়েছে। কাটা ধানও মাঠে রয়েছে কৃষকের। ধানের মধ্যে বোনা সহফসল কলাইয়ে (খেসারি ডাল) অংকুর গজিয়েছে। আবহাওয়ার এমন বৈরীতায় মাঠের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।
বৃষ্টি ও বাতাসে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার বিঘা জমির ধানের গাছ পড়ে গেছে। পানিতে ডুবে থাকা কিছু কিছু ধানে এরই মধ্যে পচন ধরেছে। আমনের সহফসল কলাইয়ের (খেসারি ডাল) অংকুরেও পচন ধরেছে।
তবে, কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, উন্নত ফলনশীল ও স্থানীয় জাত মিলিয়ে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ১৪ হাজার চাষির মাধ্যমে এ বছর ৭০ হাজার বিঘা জমিতে আমনের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের রয়েছে ৩০ হাজার বিঘা। উফশী জাতের ধান স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। শুধুমাত্র স্থানীয় জাতের মোটা ও চিকন কাচা ও পাকা আমন বাতাসে নুয়ে পড়েছে। এর পরিমাণ ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার বিঘা হতে পারে। আবহাওয়া যদি এভাবে থাকে তাহলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া, কলাই বোনা হয়েছে ২৮ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে। পানিতে না তলালে কলাইয়ের ক্ষতি হবে না।
রায়েন্দা ইউনিয়নের খাদা গ্রামের চাষি মো. রুহুল আমীন আকন জানান, তিনি ৮বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন। তার মধ্যে তিন বিঘার পাকা ধান একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
খাদা গ্রামের মহারাজ মোল্লা জানান, তাদের একমাঠেই প্রায় ৫০ বিঘা কাচা আমন শুয়ে গেছে। তার এবং তার ভাই আ. রহিম মোল্লার প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে কলাই বোনা রয়েছে। তাতে কেবল গজ ফুটতে শুরু করেছে। বৃষ্টিতে তার বেশিরভাগই পচে গেছে। এক মণ কলাই বীজ আড়াই হাজার টাকা দরে কিনে ধান পাকার আগ মুহূর্তে বোনা হয়েছে। এখন বীজও পাওয়া যাবে না, আর এখন বোনার সময়ও শেষ হয়েছে।
এদিকে, সাতক্ষীরা থেকে ধান কাটতে এসে বিপাকে পড়েছেন পরবসীরা (কৃষি শ্রমিক)। ১০ দিন আগে ১৬ জনের একটি দল নিয়ে শরণখোলায় এসেছেন মো. গফুর শেখ (৫৫)। গত শুক্রবার দুর্যোগ শুরুর আগ পর্যন্ত ১০বিঘা জমির ধান কেটেছেন তারা। সেই কাটা ধানের বেশিরভাগই মাঠে পড়ে আছে। কিছু কিছু ধানে পচন ধরেছে।
শ্রমিকের দলনেতা গফুর শেখ জানান, মণপ্রতি ৫ কেজি করে ধান পান তারা। মালিক একবেলা খেরাকি (খাবার) দেন। বাকি দুই বেলা তাদের খচরে খান। আবহাওয়ার এই অবস্থায় এখন তাদের বসে বসে খেতে হচ্ছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন।
শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসীম উদ্দি জানান, দুর্যোগের পূর্বাভাষ পেয়ে চাষিদের আগেই শতর্ক করা হয়েছে। মাঠের কাটা ধান তুলে নিতে বলার পরেও কিছু এখনো মাঠে রয়েছে। পানি না জমলে ধান ও কলাইয়ের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে, এই বৃষ্টি শীতকালীন শাক-সবজির উপকার হবে।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এখনো সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া না গেলেও প্রাথমিকভাবে ১৮ থেকে ২০ হাজার বিঘা জমির ধান নুয়ে পড়ার খবর জানা গেছে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নে আমনের মাঠের অবস্থা জানতে আমাদের সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জরিপ শুরু করেছেন।
বিএসডি / এলএল