নিজস্ব প্রতিবেদক:
দলের নেতার ওপর হামলা ও সাম্প্রদায়িক উক্তির অভিযোগ তুলে পুলিশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যবহার করেছে বলেই পুলিশের এত সাহস।
তিনি বলেন, আমি ঘৃণা জানাই, ধিক্কার জানাই সেই কর্মকর্তাকে, ধিক্কার জানাই সরকারকে তারা এ ধরনের কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। পুলিশ আজ এত কথা বলতে সাহস পায় কোত্থেকে? কারণ আপনারা রাতে ভোট করার সময় পুলিশকে ব্যবহার করেছেন। ১৪ বছর ধরে যারা এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, তাদের দমন করার জন্য, নির্যাতন-নিপীড়ন করার জন্য ব্যবহার করেছেন। যাকে আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে—একজন সন্ত্রাসী, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তাকে আপনারা পবিত্র পদে আসিন করে রেখে দিয়েছেন।
আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল সালামের সাম্প্রদায়িক উক্তি এবং বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর ওপর হামলার প্রতিবাদে এই সভার আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষের যে শক্তি, গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছেন, সংগ্রাম করছেন, সারা বাংলাদেশে তাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। তাদের আক্রমণ করা হচ্ছে, আহত করা হচ্ছে, কোথাও কোথাও নিহত করা হচ্ছে। গত এক যুগে বাংলাদেশে যে চরম অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব কিছু করার বিষয়গুলো প্রকট হয়ে উঠেছে। কেরানীগঞ্জের ঘটনা নয়।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি সারা বিশ্বে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আমি কোনো পক্ষ নিয়ে কথা বলতে চাই না, ইউক্রেনে যে আক্রমণ করেছে রাশিয়া এটাকে কোনো মতে মানবতার দিক থেকে সমর্থক করা যায়? আজ যে দৃশ্যগুলো আমরা দেখছি, শিশুরা-নারীরা কীভাবে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কীভাবে মানুষ নিহত হচ্ছে! ভারতে দেখি, ছাত্রী হিজাব পরায় তাকে শিক্ষালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না। বিশ্বের সমস্ত শুভ বুদ্ধির মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষ এর প্রতিবাদ করছে।
বাংলাদেশ কখনো সাম্প্রদায়িক দেশ না। হাজার হাজার বছর ধরে এখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ভাই-বোনের মতো বসবাস করেছে। সেই সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য, সেই সম্পর্ককে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জন্য আওয়ামী লীগ বরাবরই এই কাজ করেছে। রমনার কালী মন্দির কারা ভেঙেছে, কারা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে সবাই জানে। এই আওয়ামী লীগ কালী মন্দির ভেঙেছিল। বেগম খালেদা জিয়ার সরকার পুনর্নির্মাণ করেছেন। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি দখল করে নিয়েছিল তারা, সেই জমি ফেরত নিয়ে আসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তৎকালীয় মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। কিছু দিন আগে এই সরকারের আমলে দুর্গা পূজার সময় কুমিল্লাসহ অন্যান্য জায়গায় যে ঘটনাগুলো ঘটলো, নিরপেক্ষ তদন্তের বেরিয়ে আসতো কারা করেছে। ছাত্রলীগ বা যুবলীগের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে, বলেন ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, এর আগে নাসিরনগর, রামুতে একই ঘটনা। যেখানেই দেখবেন, যত সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে, আমাদের হিন্দু ভাইদের সম্পত্তি নিয়ে যাচ্ছে; ভুলে গেছে সবাই, বলে না, আওয়ামী লীগের এমপি দবিরুল ইসলাম হিন্দু ভাইদের কত শত একর জমি দখল করে নিয়েছে পত্রিকায় বের হয়নি? এটাই হচ্ছে তাদের চরিত্র, তারা প্রতারণা করে। তারা মুখে বলবে এক কথা, কাজ করবে আরেকটা। আমাদের একমাত্র কাজ এখন গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। গণতন্ত্রের জন্য যিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশের ১৮ মানুষকে মুক্ত করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তাদেরই ছিল। আমরা বরং বাধা দিয়েছিলাম। পরে আমরা মেনে নিয়েছিলাম। জনগণের আকাঙ্ক্ষা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনো জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাননি। তিনি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে সংযুক্ত করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৪টা নির্বাচন হয়েছে, একটা প্রশ্ন কেউ করেনি। ক্ষমতায় এসে দেখলো, এই ব্যবস্থা থাকলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। কারণ জনগণ তাদের আর ভোট দেবে না।
আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের মাথাব্যথা নির্বাচনকালে সরকারে কারা থাকবে। যদি আওয়ামী লীগ সরকারে থাকে, নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন কোনো নির্বচন হবে না। কারণ তারা তাদের মতো করে একই কায়দায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। আর আমরা বসে বসে দেখবো? আমরা সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না। একমাত্র দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, বলেন তিনি।
বিএসডি/ এলএল